 |
|
বাংলার মন্দির নগরীর কথা উঠলেই যে দুটি
স্থানের নাম আগে উঠে আসবে তা হল বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর ও বর্ধমানের কালনা। মানছি যোগাযোগের সুবিধার জন্য এদের নাম প্রথম সারিতে থাকে। তবে এদেরকে ছাড়াও গ্রাম বাংলায় রয়েছে আরও এক মন্দিরময় গ্রাম - পাথরা। কলকাতা থেকে ১৪০ কিলোমিটার পশ্চিমে কাঁসাই নদীর তীরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার
একটি ছোট্ট গ্রাম হল পাথরা। কালনা যদি টেরাকোটা, বিষ্ণুপুর যদি মাকড়া পাথরের
মন্দিরের জন্য বিখ্যাত হয়ে থাকে, তবে পাথরা বিখ্যাত হবে মন্দিরের বৈচিত্রের কারণে। মন্দিরময় এই
ছোট্ট গ্রামটিতে বাংলার চালা, রত্ন, দালান, দেউল, মঞ্চ সমস্ত রীতিরই মন্দির দেখতে
পাওয়া যায়। তবে যুগের পর যুগ নদীর কড়াল গ্রাসে এবং ঠিকমতো সংরক্ষণের অভাবে পাথরার অনেক
মন্দিরই ধ্বংস হয়ে গেছে। অতীতে পাথরা গ্রামে ঠিক কতগুলো মন্দির ছিল তা জানা যায়
না, তবে বর্তমানে গ্রামটিতে ৩৪ টি মন্দিরের অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়। আর এই
অবশিষ্ট মন্দিরগুলি টিকে রয়েছে শুধুমাত্র একজন মানুষের প্রচেষ্টায়, মহম্মদ ইয়াসিন
পাঠান... যার অদম্য চেষ্টায় পাথরার এই মন্দিরগুলি কোনোমতে টিকে রয়েছে। কে বা কারা
মেদিনীপুরের এই ছোট্ট গ্রামে এতগুলো মন্দির তৈরি করল? আর কিভাবেই বা পাথরার এই
মন্দিরগুলি ইয়াসিন পাঠানের প্রচেষ্টায় নবরূপ পেল, সেই নিয়েই আজকের ব্লগ মন্দিরময়
পাথরা......
 |
কাঁসাই নদী (কংসাবতী) |
পাথরার ইতিহাস –
পাথরার ইতিহাসকে মোটামুটি দুটি ভাগে ভাগ
করা যায়, এক পাথরা নামকরণের প্রাক্বালে ও নামকরনের পরবর্তী সময়ে। তবে এসবেরও
পূর্বে পাথরা গ্রামটি যে বহু প্রাচীন সে সম্পর্কে প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পাওয়া
গেছে। তারাপদ সাঁতরা জানাচ্ছেন এই পাথরা গ্রাম থেকে পাওয়া গেছে বিষ্ণু লোকেশ্বর
মূর্তি, যা ভাস্কর্যের নিরিখে খ্রিস্টীয় নবম শতকের পুরাবস্তু। মহাযানী বৌদ্ধ দেবতা
লেকেশ্বর ও ব্রাহ্মণ দেবতা বিষ্ণু এই দুইয়ের সংমিশ্রণে নির্মিত মূর্তি। স্থানীয়
ইতিহাসবিদ ইয়াসিন পাঠান জানাচ্ছেন মূর্তিটি পাওয়া যায় ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে, দৈর্ঘ্য
২’২” ও প্রস্থ ১’১” এবং বর্তমানে মূর্তিটি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে। এছাড়াও পাথরার নিকটবর্তী গ্রামে এবং কাঁসাই নদীর
(কংসাবতী) তীরে এককালে পাথরের তৈরি যে শিখর রীতির মন্দির ছিল তার অস্তিত্ব এখনও
আনাচে কানাচে দেখা যায়। যেমন কাঁসাই নদীর এপাড়ে পাথরা আর অন্যপাড়ে বেড় জনার্দনপুর
গ্রাম কিমবা তার পাশেই জিনসর গ্রামে দেখা যায় বেশকিছু জৈন মন্দিরের ভগ্নাংশ ও মন্দিরে
ব্যবহৃত আমলক শিলার ভগ্নাংশ। কাছেই বালিহাটি গ্রামের সীমানায় দেখতে পাওয়া যায়
ঝামাপাথরের তৈরি এক মন্দিরের ভগ্নাংশ, স্থাপত্যের সময় বিচার করলে দশম-একাদশ শতক। অর্থাৎ
পাথরা ও তার নিকটবর্তী গ্রামগুলিতে একসময়ে ব্রাহ্মণ্য, জৈন ও বৌদ্ধধর্মীয়
মঠ-মন্দির নির্মিত হয়েছিল সে বিষয়েক কোনও সন্দেহ নেই। ইতিহাসবিদদের মতে পূর্বে পাথরা তাম্রলিপ্ত বন্দরের পশ্চাৎভূমি হিসাবে কাজ করত। গুপ্তযুগে তাম্রলিপ্ত বন্দরের যখন রমরমা তখন কংসাবতী নদী মারফত আগত বিভিন্ন ধর্মীয় বণিক-ব্যবসায়ীদের কিমবা ভিক্ষুকদের নৌকা ভিরত পাথরার এই প্রাচীন গ্রামে। সেই সূত্রেই এখানে গড়ে উঠেছিল এই প্রাচীন মন্দিরগুলি। আজ থেকে প্রায় এক শতক আগেও কিন্তু কাঁসাই নদীতে নৌকা চলাচল করত, এখন যদিও সে নদী তার নাব্যতা হারিয়েছে। বর্তমানে যেখানে পাথরার মন্দিরগুলি দেখা যায় ঠিক তার পারেই বসত হাট, চলত বেচাকেনা। তবে পাথরার পরবর্তী ইতিহাস
শুরু হয় সতের-আঠারো শতকে, যখন ভিন্ন স্থান থেকে আগত ঘোষাল পরিবার (নবাবের দেওয়া পদবি
মজুমদার) এখানকার জমিদারি লাভ করে এই গ্রামেই কাছারি সহ বসতবাড়ি তৈরি করেন এবং
ক্রমে তাদের বাস্তুভিটাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে বংশপরম্পরায় বিভিন্ন রীতির
মন্দির স্থাপন করা হয়। তবে গল্পটা শুরু হয় অন্যরকমভাবে –
 |
পাথরার ধর্মরাজ মন্দিরে পঙ্খের কাজ |
 |
রাসমঞ্চে টেরাকোটার মূর্তি (মস্তকবিহীন) |
 |
বিগ্রহ শূন্য মন্দির |
সময়টা অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি, বাংলা-বিহার-ওড়িষ্যার
নবাব তখন আলীবর্দি খাঁ। বাংলার শাসনকর্তা হিসাবে আলীবর্দি খাঁ ছিলেন সর্বধর্ম
প্রিয় নবাব, সিংহাসনে বসার পরই সুশাসনের জন্য নবাব প্রতিটি পরগণায় হিন্দু-মুসলিম
নির্বিশেষে সুশিক্ষিত ব্যক্তিদেরকে নায়েব বা মুসমাদার পদে নিযুক্ত করেন। সেইসময়
রাঢ় বঙ্গের এই অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার পাথরা গ্রামটি রতনচক পরগণার অন্তর্ভুক্ত
ছিল। বাংলার নবাব আলীবর্দি
খাঁ এই রতনচক পরগণার নায়েবের পদে নিযুক্ত করেন এক উচ্চশিক্ষিত পূজারি ব্রাহ্মণ কে,
নাম বিদ্যানন্দ ঘোষাল। আলীবর্দি খাঁ শুধুমাত্র বিদ্যানন্দ কে নায়েব পদে নিযুক্ত
করলেন না, সঙ্গে বিদ্যানন্দের ভাই বিদ্যাধর ঘোষাল কেও নায়েবের পদে নিযুক্ত করেন,
তবে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হল বড়িষা ও মগড়া পরগণার। বাংলায় যাকে নায়েব বলা হয়
উর্দুতে তাকেই বলে মুসমাদার। তো এই বিদ্যানন্দ ঘোষালের কাজ ছিল প্রজাদের কাছ থেকে খাজনা
আদায় করে সেরেস্তায় জমা রাখা এবং সঠিক সময়ে তা নবাবের দপ্তরে পৌঁছে দেওয়া।
ভাগ্যচক্রে হোক বা ঘটনাচক্রে দরিদ্র ব্রাহ্মণ থেকে নায়েব পদে নিযুক্ত হওয়ায় বিদ্যানন্দের
প্রভাব প্রতিপত্তি ফুলে ফেঁপে ওঠে। এমত অবস্থায় বিদ্যানন্দের পিতা রাঘবরাম মারা
যান। কিছুদিনের জন্য বিদ্যানন্দ ভেঙে পড়েন এবং নবাবের কাছে খাজনা পাঠাতে বিলম্ব হয়। এদিকে
বিদ্যানন্দের গুরুদেব একদিন এলেন শিষ্যের বসতবাটিতে। শিষ্যের এমন প্রভাব
প্রতিপত্তি দেখে গুরুদেব অবাক হয়ে যান। বিদ্যানন্দ কিন্তু তাঁর গুরুদেবকে হতাশ
করলেন না, অর্জিত খাজনার সমস্তটাই গুরুদেবকে অর্পণ করলেন। কিন্তু গুরুদেব সেই অর্থ
নিলেন না, এই ঐশ্বর্য প্রতিপত্তির মায়া তিনি অনেক আগেই ত্যাগ করেছেন। তিনি
বিদ্যানন্দকে নির্দেশ দিলেন এই অর্থ বরং ধর্মীয় কাজে কিমবা সেবামূলক কাজে উৎসর্গ
কর যাতে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। গুরুদেবের কথামতো বিদ্যানন্দ খাজনার অর্থ দিয়ে
দেবসেবার কাজে লেগে পড়লেন, তৈরি করতে লাগলেন বিভিন্ন মন্দির। কিন্তু একজন নায়েবের দায়িত্ব
হল সময়মতো অর্জিত খাজনা রাজ দরবারে পৌঁছে দেওয়া, আর বিদ্যানন্দ সেই কাজে গাফিলতি
করলেন। এদিকে রতনচক পরগণা থেকে খাজনা আসছে না দেখে নবাবের সৈন্যরা হাজির হল গ্রামে। বিদ্যানন্দের এই কাণ্ডকারখানা দেখে সৈন্যরা তাঁকে বন্দী করে নিয়ে গেল
মুর্শিদাবাদের রাজ দরবারে। বিচার ব্যবস্থার পর নবাব বিদ্যানন্দকে মৃত্যুদণ্ডের
শাস্তি দিলেন। আদেশ দিলেন তাঁকে পাগলা হাতির সামনে ফেলে দেওয়া হোক, যাতে হাতির
পদতলে বিদ্যানন্দ পিষ্ঠ হয়ে মারা যান। এরপর নবাবের সৈন্যরা বিদ্যানন্দকে নিয়ে এলেন
রতনচক পরগণায়। ঢাঁক ঢোল পিটিয়ে এলাকাবাসীদের জানিয়ে দেওয়া হল বিদ্যানন্দ সময়মতো খাজনা রাজ
দরবারে পাঠাননি এবং ভবিষ্যতে এমন কোন ঘটনা যাতে আর না ঘটে তাই নবাবের হুকুম মতো
তাঁকে পাগলা হাতির সামনে ফেলে দেওয়া হবে। জনশ্রুতি এই যে বিদ্যানন্দকে হাত পা
বেঁধে মাঠের মধ্যে ফেলে দেওয়া হল, কিন্তু পাগলা হাতি বিদ্যানন্দকে পর পর তিনবার
পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আবার আর একটি মতে হাতি বিদ্যানন্দের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে,
শত চেষ্টাতেও হাতি পা ওঠাতে রাজি হয় না। এমন ঘটনা দেখে নবাবের সৈন্যরা ছুটে যান রাজ
দরবারে, সঙ্গে নিয়ে গেলেন বিদ্যানন্দকে। বিদ্যানন্দ তাঁর গুরুদেবের আদেশ দেওয়া
ঘটনাগুলি জানালেন। সমস্ত ঘটনা শুনে নবাব বিদ্যানন্দের শাস্তি মকুব করেন এবং
তাঁকে রতনচক পরগণাটি দান করে দেন। নায়েব থেকে জমিদার পদে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বিদ্যানন্দ
আগের থেকে আরও অধিক পরিমাণে সেবামূলক কাজে নিজেকে উৎসর্গ করলেন।
 |
পাথরার রেখা দেউল রীতির শীতলা মন্দিরের প্রবেশদ্বারে মূর্তি ও প্রাণীর মুখমণ্ডল |
 |
পাথরার মন্দিরগুলিতে টেরাকোটার ফলক |
তাঁর মৃত্যুর পর প্রথম পক্ষের স্ত্রীর
সন্তান রত্নেশ্বর এই রতনচক পরগণার জমিদার হিসাবে নিযুক্ত হন। রত্নেশ্বর ঘোষাল
নবাবের কাছ থেকে মজুমদার উপাধি পান। ঘোষাল হয়ে যায় মজুমদার। রত্নেশ্বর তাঁর বাবার স্মৃতিকে স্মরণীয় করে
রাখতে রতনচক পরগণার নাম পরিবর্তন করলেন। ওই যে পাগলা হাতির পায়ে চাপা পড়া থেকে
বিদ্যানন্দ বেঁচে গেলেন সেই স্মৃতিকেই স্মরণীয় রাখতে নাম রাখলেন ‘পাতরা’, অর্থাৎ ‘পা থেকে উৎরে যাওয়া’। আর এই ‘পাতরা’ কালের অপভ্রংশে হয়ে দাঁড়াল ‘পাথরা’।
পাথরার জমিদার –
পাথরার জমিদারিত্ব মূলত আরম্ভ হয়
বিদ্যানন্দের হাত ধরে। বিদ্যানন্দের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র রত্নেশ্বর পাথরার
জমিদার পদে বসেন। এখানে বলে রাখা ভালো নবাবের দেওয়া উপাধির দৌলতে রত্নেশ্বর ঘোষাল
পরিবর্তন ঘটে রত্নেশ্বর মজুমদারে। তবে ঘোষাল-দের আর এক শাখা কিন্তু মজুমদার পদবী
গ্রহণ করেননি, বর্তমানে এখনও কাঁসাই –এর ওপারে বেড় জনার্দনপুর গ্রামে ঘোষাল পদবীর মানুষজন দেখা যায়, যারা সম্পর্কে
এই পাথরার ঘোষাল পরিবারেরই সূত্রধর। এদিকে পাথরায় পরবর্তীকালে এই মজুমদার বংশে আর
কোন উত্তরাধিকারী না থাকায় জমিদারিত্ব চলে যায় মজুমদারের দৈহিত্র বন্দ্যোপাধ্যায় বংশে।
যতদূর জানা যায় ষষ্ঠ প্রজন্ম পর্যন্ত মজুমদার বংশে পাথরার জমিদারিত্ব ছিল। তারপর
বন্দ্যোপাধ্যায় বংশের সাথে মজুমদার বংশের এক কন্যার বিবাহিত হওয়ায় জমিদারিত্ব
হস্তান্তর হয় বন্দ্যোপাধ্যায়দের কাছে। পুনরায় বন্দ্যোপাধ্যায় বংশে কোন উত্তরসূরি
না থাকায় জমিদারিত্ব চলে যায় বন্দ্যোপাধ্যায়দের দৌহিত্র মুখোপাধ্যায় বংশে। এরা আবার পরবর্তীকালে বক্সী উপাধিতে ভূষিত হন।
ভাগ্যক্রমে মুখোপাধ্যায় বংশেরও উত্তরসূরি না থাকায় শেষমেশ জমিদারিত্ব স্থানান্তর
ঘটে ভট্টাচার্য পরিবারে।
 |
মন্দিরের দ্বারপাল (চিত্র ১) |
 |
মন্দিরের দ্বারপাল (চিত্র ২)
|
শুধুমাত্র জমিদারী নয়, এককালে নীল ও
রেশম চাষে পাথরা সুখ্যাতি অর্জন করেছিল। আর এই শিল্পে মুখ্য ভূমিকায় ছিল পাথরার বন্দ্যোপাধ্যায় জমিদারেরা। তবে এই দৈহিত্র বংশের জমিদারী সমৃদ্ধশালী পাথরা গ্রামকে ধীরে
ধীরে ভগ্নস্তূপে পরিবর্তন করে। পাথরার এই অবনতির সম্পর্কে অনুসন্ধান করলে মোটামুটি
দু-তিনটি কারণ উঠে আসে – যার মধ্যে দৌহিত্র জমিদারী, প্লেগ-মহামারি, বর্ধমান জ্বর বা ম্যালেরিয়া;
হ্যাঁ সেই উনবিংশ শতাব্দীর বর্ধমান জ্বর যা ছড়িয়ে পড়েছিল মেদিনীপুরের উত্তর থেকে
দক্ষিণে। মহামারির এই প্রকোপে গ্রাম কে গ্রাম শ্মশান হয়ে যাওয়ায় পাথরার এই গ্রাম
থেকেও একে একে অন্যত্র পালাতে শুরু করে, হয়তো তখনই পাথরার বিত্তবানরা
অন্য জায়গায় চলে যান। আর একটি কারণ নীল চাষের ঘাটতি, উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে কৃত্রিমবাজারে, নীল বাজারে এলে চাষবাসের পাঠ ধীরে ধীরে সমাপ্তি
ঘটে। তবে বর্তমানে এখনও পাথরা গ্রামে মজুমদার, মুখোপাধ্যায়, ভট্টাচার্য,
বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের একটি করে পরিবার রয়েছে।
 |
পঞ্চরত্ন মন্দিরের গায়ে কাঁসাই-এর বাঁধের রাস্তা |
 |
বাঁধের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা আটচালা মন্দির |
পাথরার মন্দির –
মজুমদার – বন্দ্যোপাধ্যায় ছিল পাথরার মূল জমিদার
বংশ। বিভিন্ন সময়ে পাথরার এই জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন মন্দির।
শুরুটা বিদ্যানন্দের হাতে হলেও পরবর্তীকালে তাঁর মৃত্যুর পর রত্নেশ্বর ও তারও
পরবর্তী সময়ে বন্দ্যোপাধ্যায়রা তাদের ভদ্রাসনকে কেন্দ্র করে গড়ে তোলে
বিভিন্ন রীতির টেরাকোটা মন্দির। তবে পূর্বে পাথরায় ঠিক কটা এরকম মন্দির ছিল তার সঠিক তথ্য পাওয়া যায় না। বর্তমানে এখানে
শুধুমাত্র ৩৪ টি মন্দির দেখতে পাওয়া যায়, যাদের মধ্যে কয়েকটি অক্ষত অবস্থায় আর
বাকিগুলি ভগ্নপ্রায় অবস্থায় রয়েছে। পাথরার এই মন্দিরগুলি পরিত্যক্ত হওয়ার পিছনেও
রয়েছে কয়েকটি কারণ, এর মধ্যে প্রধান কাঁসাই নদীর গতিপথ। বর্তমানে পাথরা আরও
জনশূন্য ও মন্দিরগুলির প্রাচুর্য কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ নদীর ভাঙন। কাঁসাই নদীর
প্রবাহ উত্তর দিকে অনেকটা সরে আসায় পাথরা গ্রামের দক্ষিণ প্রান্ত ধীরে ধীরে
নদীগর্ভে চলে যেতে থাকে, যার ফলে পাথরার বেশকিছু মন্দির নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।
পরবর্তীকালে আবার এই ভাঙন প্রতিরোধের জন্য বাঁধ তৈরি হলে, বেঁচে থাকা মন্দিরগুলির
মধ্যে কয়েকটি মন্দির আবার সেই বাঁধের তলায় চাপা পড়ে সলিলসমাধি হয়েছে। আবার অনেক মন্দির স্থানীয়দের চাহিদা মেটাতে গিয়ে ধীরে ধীরে ভগ্নস্তূপে পরিবর্তন
হতে থাকে, জমিদারের প্রভাব প্রতিপত্তি খর্ব হওয়ার পর গ্রামের অধিবাসীরা মন্দিরের ও
জমিদারের বাস্তুভিটা থেকে চটি ইঁট খুলে নিয়ে যেতে থাকেন। রাতের অন্ধকারে একের পর
এক মন্দিরের বিগ্রহ পাচার হতে শুরু করে। এমনকি পরবর্তীকালে পাথরার এক জমিদার পরিবারের বংশধর অর্থের বিনিময়ে মন্দিরের পাথর বিক্রি করে দেন। বিগ্রহ শূন্য মন্দিরগুলির
থেকে এমনকি জমিদারদের কাছারিবাড়ি থেকেও গ্রামের অধিবাসীরা ইঁট খুলে নিয়ে গিয়ে
নিজেদের ঘরবাড়ি বানাতে শুরু করে, বর্তমানে ক্ষেত্রসমীক্ষায় গেলে এখনও পাথরার
গ্রামে সেইসব নিদর্শন দেখতে পাওয়া যাবে।
 |
অতীতের কোন এক দালানের ভগ্নাবশেষ (চিত্র ১) |
 |
অতীতের কোন এক দালানের ভগ্নাবশেষ (চিত্র ২)
|
তবে পাথরার সব মন্দির বিলীন হয়ে যায়নি।
প্রায় ভগ্নস্তূপে পরিণত হতে বসা মন্দিরগুলি এখন কিছুটা হলেও রক্ষা করা গেছে। আর এই
সংস্কারের পিছনে যার নাম জড়িয়ে রয়েছে তিনি এই পাথরার পাশেই হাতিহলকা গ্রামের মোঃ ইয়াসিন পাঠান। মাত্র ১৭ বছর বয়স থেকে ইয়াসিন পাঠান তাঁর অদম্য ইচ্ছায় পাথরার এই অসংখ্য
প্রাচীন ও ঐতিহাসিক মন্দিরগুলি বাঁচানোর তাগিদে লড়াই শুরু করেছিলেন। আজ থেকে প্রায়
৫০ বছর আগে শুরু হয়েছিল সেই লড়াই। একা হাতে ইয়াসিন পাঠান ছুটেছিল পাথরার মন্দির
রক্ষার্থে, সাথে পেয়েছিলেন পরিব্রাজক তারাপদ সাঁতরা মহাশয়কে। বিভিন্ন পত্রিকায়
লেখালেখি, সভা-সমিতির পর শেষে ১৯৯১ সালে গঠিত হয় পাথরা পুরাতত্ত্ব সংরক্ষণ কমিটি।
ইয়াসিন পাঠানের এই অপরিসীম উদ্যোগ শেষপর্যন্ত টেনে নিয়ে এসেছিল ASI কে। পাথরার ৩৪ টি মন্দিরের মধ্যে ২৮ টি মন্দিরকে ভারতীয়
পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ তাঁদের নিজেদের অধীনে নেয়। মন্দির সংস্কারে প্রযুক্তিগত
সাহায্য করে খড়গপুরের IIT। যতটা জানা যায় পাথরার জমিদারেরা ছিলেন
শৈব ধর্মের উপাসক। আর সেই জন্যেই পাথরা গ্রামে ১৬ টি শিবের মন্দির দেখা যায়। শিবের
মন্দির ছাড়াও রয়েছে ধর্মরাজ মন্দির, দুর্গামন্দির, কালাচাঁদ, শীতলা মন্দির,
রাসমঞ্চ। বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা পাথরার মন্দিরগুলিকে তিনটি কমপ্লেক্সে ভাগ করা
হয়েছে – নবরত্ন টেম্পেল কমপ্লেক্স, কালাচাঁদ টেম্পেল কমপ্লেক্স ও রাসমঞ্চ টেম্পেল
কমপ্লেক্স।
 |
বাঁধের গায়ে সলিল সমাধি ঘটা এক নবরত্ন মন্দির |
 |
মাকড়া পাথরের দেওয়াল |
তাহলে এবার ঘুরে দেখা যাক পাথরার
মন্দিরগুলি –
পাথরা গ্রামে প্রবেশের মুখেই কলাইচন্ডী
খাল, যা মিশেছে কাঁসাই নদীতে। এই কলাইচন্ডী খালের ব্রিজটি (সড়কের নাম
হাতিহলকা-পাথরা রোড) পেরোলেই বামদিকে পড়বে আটচালা একটি শিব মন্দির। কিছুদিন আগে
গেলেও মন্দিরের মধ্যে পুরনো স্থাপত্যের নিদর্শন পাওয়া যেত, কিন্তু সম্প্রতি তা
সংস্কারের পর বোঝা মুশকিল। পাথরার বন্দ্যোপাধ্যায় জমিদার বংশের কোন বংশোদ্ভূত উনিশ
শতকে নির্মাণ করে এই শিবমন্দির, বর্তমানে মন্দিরে শিব ছাড়াও অন্যান্য দেবদেবী
পূজিত হন। শিবমন্দির থেকে বেড়িয়ে পুনরায় এলাম পিচ রাস্তায়, পূর্বে রাস্তাটি
লালমাটির হলেও সম্প্রতি তা পাকা রাস্তায় পরিণত হয়েছে। এখানে বলে রাখা ভালো এই
রাস্তাটিই আসলে কাঁসাই নদীর বাঁধ। এই রাস্তা ধরেই পূর্বদিকে কিছুদূর যাওয়ার পর
ডানদিকে প্রায় ষাট মিটার দূরে নদীর গা ঘেঁসে দেখতে পাওয়া যায় ধর্মরাজ মন্দির।
 |
ধর্মরাজ মন্দির |
ধর্মরাজ মন্দির –
উঁচু বাঁধের রাস্তা থেকে নেমে
ধান জমির আলের পথ ধরে পৌঁছে যাওয়া যাবে ধর্মরাজ মন্দির। পঞ্চরত্ন
বিশিষ্ট এই ধর্ম ঠাকুরের মন্দিরটি দক্ষিণমুখী। মন্দিরটি যে জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে
ঠিক তার এক হাত দূর থেকেই শুরু হয়েছে নদীর ভাঙন। নদীর পাড় ভাঙতে ভাঙতে কাঁসাই যেন
ঠিক এই মন্দিরের সামনে এসে সরে গেছে। তারাপদ সাঁতরা ১৯৬৯ সালে যখন পাথরায় আসেন তখন
নদীর ভাঙনের অবস্থা যতটুকু দেখেছিলেন, বর্তমানে ঠিক ততটাই ভাঙন রয়েছে মন্দিরের
সামনে। জানিনা বিগত কয়েক বছরে বন্যার যা পরিস্থিতি তাতে মন্দিরটির সময়সীমা কতদিন
থাকবে। ধর্ম ঠাকুরের এই মন্দিরটি ত্রিখিলান বিশিষ্ট, এককালে মন্দিরে টেরাকোটার ফলক
থাকলেও বর্তমানে তার কোন চিহ্ন নেই। পূর্বে যে মন্দিরের চতুর্দিকে অপূর্ব পঙ্খের কাজ
ছিল তা বর্তমানে মন্দিরের সামনে কিছুটা দেখা যায়। মন্দিরে কোন প্রস্তরফলক নেই। বর্তমানে মন্দিরটি রয়েছে ভট্টাচার্য পরিবারের তত্ত্বাবধানে। রাঢ় অঞ্চলের সর্বোচ্চ
দেবতা, বলা যায় বাংলার গণদেবতা হলেন ধর্মঠাকুর। চোরা পাচারির হাত থেকে বাঁচাতে
মন্দিরের বিগ্রহ ধর্ম ঠাকুর রয়েছেন ভট্টাচার্যের বাড়িতে। মন্দিরের বাম পাশে জমিতে
রয়েছে গোট খাল বা গোট পুজোর স্থান।
 |
নবরত্ন মন্দির (অভিশপ্ত) |
 |
নবরত্ন মন্দিরে টেরাকোটা ফলকের ভগ্নাংশ |
নবরত্ন মন্দির / নবরত্ন মন্দির
কমপ্লেক্স –
ধর্মরাজ মন্দির থেকে বেড়িয়ে পুনরায় পুবদিকে পাকা রাস্তা ধরে মিনিট দুই হাঁটার
পর ডানদিকে অর্থাৎ বাঁধের দক্ষিণদিকে দেখতে পাওয়া যায় পাথরার অন্যতম শ্রেষ্ঠ
নবরত্ন মন্দির, যা শুরু থেকেই পরিত্যক্ত ও জনশ্রুতি অনুসারে অভিশপ্ত। ভারতীয়
পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ কর্তৃক এই জায়গাটির নাম নবরত্ন কমপ্লেক্স। নবরত্ন মন্দির
ছাড়াও কমপ্লেক্সে রয়েছে আরও কিছু সমতল ছাদ বিশিষ্ট দালান রীতির মন্দির। আনুমানিক আঠারো শতকের মাঝামাঝি
সময়ে এই নবরত্ন মন্দিরটি তৈরি হয় মজুমদার পরিবারের সহায়তায়। নবরত্ন মন্দিরে কোন
প্রতিষ্ঠালিপি নেই এবং গর্ভগৃহেও কোন বিগ্রহ নেই। যতটা জানা যায় মন্দির স্থাপন
থেকেই মন্দিরে কোন বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা হয়নি, কারণ মন্দিরটি অভিশপ্ত। জনশ্রুতি এই যে,
মজুমদার পরিবারের কোন এক জমিদার তাঁর বৃদ্ধ মা কে ঘরবন্দি করে রেখে তাঁর সাধের
নবরত্ন মন্দির নির্মাণে মননিবেশ করেন। অসুস্থ মা কে সুস্থ করার পরিবর্তে তিনি
মন্দির তৈরি করেন। মন্দিরের কাজ সম্পন্ন হলে মন্দির প্রতিষ্ঠার আগের দিন মন্দিরের চূড়ায় বাজ পড়ে।
আর সেই থেকেই মন্দিরটি অভিশপ্ত, যার ফলে মন্দিরে কোনদিনও দেবতার ঠাঁই হয়নি।
মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ৫৫ ফুট। ত্রিখিলান বিশিষ্ট এই নবরত্ন মন্দিরে পূর্বে নিচের
খিলানগুলিতে ও উপরে বাঁকানো কার্নিশে টেরাকোটার ফলক ছিল। ছিল বলছি কারণ বর্তমানে
অতি সামান্যই কয়েকটি টেরাকোটার ফলক দেখা যায়, তাও আবার অধিকাংশই ভগ্ন। তারাপদ
সাঁতরার মতে এই মন্দিরের পশ্চিম অংশে অর্থাৎ সামনের দিকে একটি বৃহৎ দালান রীতির
মন্দিরের ভগ্নাবশেষ ছিল যা পরবর্তী সময়ে তার উপরে মাটি ফেলে সেচ বাঁধটি নির্মাণ
হয়েছে।
 |
নবরত্ন কমপ্লেক্সের সমতল ছাদ বিশিষ্ট ৪ টি শিবমন্দির |
 |
তুলসীমঞ্চ (নবরত্ন কমপ্লেক্স) |
এই কমপ্লেক্সে নবরত্ন মন্দিরের বামদিকে
অর্থাৎ উত্তরদিকে রয়েছে ৪ টি সমতল ছাদ বিশিষ্ট শিব মন্দির। এই মন্দিরগুলি
দক্ষিণমুখী ও প্রতিটি মন্দিরের প্রবেশদ্বার একটি। মন্দিরে কোন বিগ্রহ নেই ও মন্দির
গায়েও কোন টেরাকোটার চিহ্ন নেই। এই শিবমন্দির গুলির পিছনে রয়েছে একটি তুলসীমঞ্চ। নবরত্ন মন্দিরের পিছন দিকে রয়েছে একটি
আটচালা রীতির শিবমন্দির। বাঁধের একদম গায়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই মন্দির বর্তমানে সমতল
ভূমি থেকে অনেকটাই নিচে, মন্দিরের প্রবেশপথ উত্তরদিকে। বর্তমানে মন্দিরে কোন
প্রস্তরফলক নেই ও গর্ভগৃহেও কোন বিগ্রহ নেই। মন্দিরের কার্নিশে ও প্রবেশদ্বারের
দুপাশে একসারি করে টেরাকোটার ফলক দেখতে পাওয়া যায়। তবে এই মন্দিরের অন্যতম নিদর্শন
দেখতে পাওয়া যায় মন্দিরের গর্ভগৃহের শীর্ষে। মন্দিরে প্রবেশ করে উপরে তাকালে দেখতে
পাওয়া যায় প্রাকৃতিক ভেষজ রঙে আঁকা আলপনা, যা এত বছর পরেও এখনও জীবন্ত।
 |
মন্দিরের গর্ভগৃহে ভেষজ রঙের আলপনা |
 |
কালাচাঁদের দালানকোঠা |
কালাচাঁদ
কমপ্লেক্স –
এরপর রাস্তার উত্তরদিকে অর্থাৎ নবরত্ন
কমপ্লেক্সের বাম পাশেই রয়েছে এক গুচ্ছ মন্দির। এই জায়গাটির নাম কালাচাঁদ
কমপ্লেক্স। প্রথমেই রাস্তার অর্থাৎ বাঁধের গায়ে দেখা যায় দালান রীতির একটি মন্দির।
সমতল ছাদ বিশিষ্ট এই মন্দির কালাচাঁদের দালানকোঠা হিসাবে পরিচিত। কালাচাঁদের দালান
তৈরি করেন পাথরার মজুমদারেরা। বাঁধের একদম গায়ে থাকার ফলে মন্দিরের প্রবেশপথ
অনেকটা নিচে। মন্দিরটিতে তিনটি ঘর বা কুঠুরি আছে, এর মধ্যে দুদিকের দুটি ঘরে থাকত বিগ্রহ।
পূর্বদিকের কুঠুরিতে থাকতেন লক্ষ্মী জনার্দন ও পশ্চিমদিকের কুঠুরিতে কালাচাঁদজী। পরবর্তীকালে কোন এক সময়ে মজুমদার পরিবারের এক বংশধর
লক্ষী জনার্দন –এর মূর্তিটি নিয়ে গিয়ে কাঁসাই নদীর ওপাড়ে বসবাস স্থাপন করেন, বর্তমানে সেই
জায়গার নাম বেড় জনার্দনপুর। আর মন্দিরের কালাচাঁদের বিগ্রহ চলে যায় মেদিনীপুরের
বেরাবল্লভপুরের মজুমদারের বাড়িতে। বর্তমানে তাই কালাচাঁদের দালানে কোন বিগ্রহ নেই।
প্রতিষ্ঠাকাল সম্বন্ধে জানা যায় না এবং মন্দিরে কোনও টেরাকোটার ফলক নেই। কালাচাঁদ
দালানের ঠিক পিছন দিকে অর্থাৎ উত্তরদিকে রয়েছে পরপর তিনটি আটচালা শিবমন্দির।
মন্দিরগুলি পূর্বমুখী ও একটি সমান্তরাল সারিতে পৃথক ভিত্তির উপর গড়ে উঠেছে।
টেরাকোটার মধ্যে শুধুমাত্র কয়েকটি ফুলের নকশার প্যানেল দেখা যায় এবং শেষ
মন্দিরটিতে প্রবেশদ্বারের উপরে কিছুটা পঙ্খের কাজ চোখে পড়ে। মন্দিরগুলির
প্রবেশপথের দুপাশে এককালে যে দ্বারপালের মূর্তি ছিল তা এখন ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে।
মন্দিরের প্রতিষ্ঠাফলক হিসাবে শুধুমাত্র শেষ মন্দিরটির চূড়ায় ফলক
দেখা যায়। ১৭৭১ শকাব্দ অর্থাৎ ইংরাজিতে ১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ ও বাংলায় ১২৫৭ বঙ্গাব্দ এবং
এর ঠিক আগের মন্দিরটি তারাপদ সাঁতরার মতে ১৮৫১ খ্রিষ্টাব্দ।
 |
আটচালা শিবমন্দির (কালাচাঁদ কমপ্লেক্স) |
 |
পঞ্চরত্ন মন্দির (কালাচাঁদ কমপ্লেক্স) |
এই তিনটি শিবমন্দিরের বিপরীতে রয়েছে একটি
পঞ্চরত্ন মন্দির, আদতে এটিও একটি শিবমন্দির। পশ্চিমমুখী এই মন্দিরের বর্তমানে কোন বিগ্রহ
নেই। মন্দিরের টেরাকোটার ফলক অনেক আগেই লুন্ঠিত হয়েছে। তবে মন্দিরের দক্ষিণ
দেওয়ালে অর্ধ খোলা খড়খড়ি দরজা থেকে এক অন্তঃপুরবাসিনীর দাঁড়িয়ে থাকার একটি লম্বা
ফলক দেখা যায়, যদিও বর্তমানে পোড়ামাটির অনেকটাই খসে পড়েছে।
 |
মাকড়া পাথরের দুর্গামণ্ডপ |
 |
দুর্গামণ্ডপের সামনে অতীতে কোন মন্দিরের ভগ্নাংশ |
মাকড়া পাথরের দুর্গা মন্দির –
এই পঞ্চরত্ন মন্দিরের উত্তরদিকে একটি
দালান রীতির মন্দিরের ভগ্নাংশ দেখা যায়। আদতে এটি একটি দুর্গা মণ্ডপ। পাথরার
মজুমদারেরা তৈরি করে এই দুর্গা মণ্ডপ। পাথরার অন্যান্য মন্দিরের থেকে এটি আলাদা শুধুমাত্র মন্দিরের উপকরণের কারণে।
পাথরার বাকি মন্দিরগুলি যেখানে ইঁট ও টেরাকোটার শিল্পে তৈরি, সেখানে এই দুর্গামণ্ডপটি
তৈরি হয়েছে আগাগোড়া মাকড়া পাথরে (ঝামা পাথর / ল্যাটেরাইট)। জমিদারীর আমলে এই দুর্গামণ্ডপটিতে
খুবই জাঁকজমক করে দুর্গা পুজো হত। বর্তমানে দুর্গামণ্ডপটি সবচেয়ে বেশি
ক্ষতিগ্রস্ত। স্থানীয় গ্রামবাসীরা অনেকেই মন্দিরের দেওয়াল ভেঙে ঝামা পাথরের
অংশগুলি খুলে নিয়ে গেছে। বর্তমানে তাই ছাদহীন এই দুর্গামণ্ডপটি শুধুমাত্র
চারদেওয়ালের ভিত্তিতে কোনমতে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
 |
বাঁধের গায়ে আটকে থাকা পঞ্চরত্ন মন্দির (কালাচাঁদ কমপ্লেক্স) |
 |
পঞ্চরত্ন মন্দিরের বাঁকানো কার্নিশে টেরাকোটার ফলক ও প্রতিষ্ঠালিপি |
এই মন্দিরগুলির সামনেই অর্থাৎ পূর্বদিকে
রয়েছে আর একটি পঞ্চরত্ন মন্দির। বাঁধের ঠিক গায়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই মন্দিরটি তাই
সমতলভূমি থেকে অনেকটাই নিচে। এই মন্দিরটিও তৈরি করেন মজুমদারেরা। ত্রিখিলানযুক্ত
এই পঞ্চশিব মন্দিরটি পূর্বমুখী। মন্দিরের একদম উপরের সারিতে রয়েছে প্রতিষ্ঠাফলক।
সেই সূত্র ধরেই জানা যায় মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা হয়েছে ১৭৪৯ শকাব্দে অর্থাৎ ইংরেজি
১৮২৭ খ্রিষ্টাব্দ ও বাংলায় ১২৩৪ বঙ্গাব্দ। পাথরার এই মন্দিরটিতে অনেকগুলিই
টেরাকোটার ফলক দেখতে পাওয়া যায়, যদিও এদের মধ্যে কয়েকটি ফলকই অক্ষত অবস্থায় রয়েছে।
এছাড়াও খিলানের উপরে রয়েছে মোটিফের ভগ্ন অংশ। তবে মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রবেশের
সম্মুখে দুপাশে দুটি লাঠি হাতে দ্বারপালের মূর্তি সবথেকে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই মন্দিরের পূর্বদিকে বাঁধের ধারেই আরও
একটি আটচালা মন্দির দেখতে পাওয়া যায়। এই মন্দিরটিও বাঁধের কারণে সমভুমি থেকে
অনেকটাই নিচে। তবে বর্তমানে এই মন্দিরটিতে সেরকম কোন টেরাকোটার ফলক বা মোটিফ দেখা যায় না। এর
ঠিক পূর্বে বাঁধের ধারে আরও একটি মন্দিরের ভগ্নাবশেষ দেখা যায়। বাঁধের মাটি অনেক
আগেই মন্দিরের প্রবেশপথ বন্ধ করে দিয়েছে। পূর্বে যে এটি দক্ষিণমুখী মন্দির ছিল তা
শুধুমাত্র রাস্তার দিকে বাঁকানো কার্নিশ দেখে বোঝা যায়। মন্দিরের উপরিভাগের কিছুই
অবশিষ্ট নেই। শুধুমাত্র উপরে একটি গম্বুজ মতো দেখে অনুমান করা যায় মন্দিরটি রত্ন
শ্রেণীর ছিল।
 |
রেখা দেউল - শীতলা মন্দির / বুড়িমার থান |
এই মন্দিরগুলি ছাড়িয়ে পুনরায় বাঁধের
রাস্তাটি ধরে পূর্বদিকে মিনিট দুয়েক গেলেই রাস্তার বামদিকে দেখতে পাওয়া যায় রেখা
দেউল রীতির একটি মন্দির। বর্তমানে এটি শীতলা মন্দির যা বুড়িমার থান হিসাবে পরিচিত।
অতীতে এখানে মজুমদারদের গৃহদেবতা থাকতো। মজুমদারদের স্থানপরিবর্তনের পর মন্দিরের
বিগ্রহ তাঁরা নিয়ে গেলে এই মন্দিরে স্থানীয়রা শীতলা দেবীকে অধিষ্ঠিত করে। বর্তমানে
মন্দিরটি সংস্কার করা হয়েছে এবং আধুনিক রঙের ব্যবহারের ফলে প্রাচীনত্ব হারিয়েছে।
তবে মন্দিরের প্রবেশদ্বারের উপরে পূর্ব-পশ্চিম কোণে থাকা দুটি মূর্তি ও প্রাণীর
মুখমণ্ডল দেখা যায়। এবার পুনরায় দেড়শো মিটার পিছনে এসে
বামদিকে অর্থাৎ গ্রামের উত্তরদিকে যাওয়ার রাস্তা। সেই পথ ধরে কিছুটা গেলেই বামদিকে
গাছপালার আড়ালে থাকা একটি পঞ্চরত্ন মন্দির দেখা যায়। মন্দিরটি আনুমানিক উনিশ শতকে
নির্মিত। বর্তমানে মন্দিরে অল্পকিছু টেরাকোটার ফলক ও পঙ্খের কাজ দেখা যায়। মন্দিরে
কোন বিগ্রহ নেই।
 |
উত্তরদিকের রাস্তা ধরে কিছুটা যাওয়ার পর পঞ্চরত্ন মন্দির |
 |
বন্দ্যোপাধ্যায়দের তিনটি পূর্বমুখী পঞ্চরত্ন মন্দির (রাস্মঞ্চ কমপ্লেক্স) |
রাসমঞ্চ
কল্পলেক্স –
গ্রামের রাস্তা ধরে উত্তরদিকে কিছুটা যাওয়ার পর ডানদিকে অর্থাৎ
পূর্বদিকে দেখতে পাওয়া যাবে একটি সংকীর্ণ গ্রাম্য মেঠো পথ। এই পথ ধরে কিছুটা গেলেই
বন্দ্যোপাধ্যায়দের ভদ্রাসনকে কেন্দ্র করে কয়েকটি মন্দির। এই জায়গাটি রাসমঞ্চ
কল্পলেক্স হিসাবে পরিচিত। প্রথমেই রাস্তার ডানদিকে দেখতে পাওয়া যায় তিনটি
পূর্বমুখী পঞ্চরত্ন মন্দির। এই মন্দিরগুলির প্রত্যেকটিই উচ্চতা ও আকারে সম মাপের।
মন্দিরগুলি প্রতিষ্ঠা করেন পাথরার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারেরা। এই মন্দিরগুলির প্রথম
অর্থাৎ উত্তরদিকের মন্দিরের উপরে রয়েছে প্রতিষ্ঠাফলক। সেই থেকেই জানা যায় মন্দিরটি
তৈরি হয় ১৭৩৮ শকাব্দ অর্থাৎ ইংরেজি ১৮১৭ খ্রিষ্টাব্দ ও বাংলায় ১২২৪ বঙ্গাব্দ।
বর্তমানে মন্দিরগুলিতে কষ্টিপাথরের শিবলিঙ্গ রয়েছে। তবে ক্ষেত্রসমীক্ষায় জানা যায়
দক্ষিণদিকের শেষ মন্দিরটি থেকে কয়েকমাস আগে মন্দিরের নিজস্ব বিগ্রহটি চুরি হয়ে যায়
এবং পরবর্তীকালে স্থানীয়রা অন্য মন্দির থেকে শিবলিঙ্গটি এনে এখানে প্রতিষ্ঠা করেন।
পাথরার অন্যান্য মন্দিরের তুলনায় এই মন্দিরের টেরাকোটা ফলকগুলি একটু হলেও ভালো
অবস্থায় রয়েছে। মন্দিরগুলির প্রবেশদ্বারের দুপাশে ও কার্নিশে টেরাকোটার ফলক দেখা
যায়, ফলকগুলি মূলত – দশাবতার, কৃষ্ণলীলা, রামসীতা, বিভিন্ন দেবদেবী ও মোহন্তদের জীবনযাত্রা নিয়ে
গড়ে উঠেছে। তবে বন্দ্যোপাধ্যায়দের এই মন্দিরগুলি আকৃষ্ট করে অন্য একটি কারণে, সেটি
হল মন্দিরের প্রবেশদ্বারের দু’পাশে নিবন্ধ করা দুটি পোড়ামাটির দ্বারপালের মূর্তি। প্রত্যেকটি মন্দিরেই রয়েছে
দুটি করে দ্বারপাল। দ্বারপালগুলিতেও রয়েছে বৈচিত্র, প্রথম অর্থাৎ উত্তরদিকের
মন্দিরটিতে যে দ্বারপাল দুটি রয়েছে তার হাতে রয়েছে লাঠি, পরের মন্দিরের দ্বারপালের
হাতে বন্দুক ও শেষের মন্দিরের দ্বারপালের হাতে তলোয়ার। তবে বর্তমানে মূর্তিগুলি
অনেকটাই ক্ষয়প্রাপ্ত।
 |
দ্বারপাল - লাঠিয়াল |
 |
দ্বারপাল - বন্দুকধারী
|
 |
দ্বারপাল - ঢাল-তলোয়ার
|
এই মন্দিরগুলি থেকে বেরিয়ে পূর্বদিকের
পথটাতে রয়েছে বন্দ্যোপাধ্যায়দের বসতবাড়ি বা কাছারিবাড়ি। তবে এখন পুরোটাই
ভগ্নস্তূপে পরিণত, ছাদ নেই শুধুমাত্র দেওলায়গুলি টিকে রয়েছে। ১৯৬৮ সালে তারাপদ
সাঁতরা যখন পাথরা ভ্রমণে আসেন তখনও নাকি বন্দ্যোপাধ্যায়রা এই বাড়িটিতে বসবাস করত।
এই কাছারিবাড়ির পূর্বদিকে ও পশ্চিমদিকে একটি করে সমতল ছাদ বিশিষ্ট শিবমন্দির দেখা
যায়। মন্দির দুটিতে বর্তমানে একটি করে শিবলিঙ্গ রয়েছে তবে মন্দিরের দেওয়ালে কোন
পোড়ামাটির নিদর্শন নেই। এই কাছারিবাড়ির পিছনদিকে দক্ষিণ-পূর্ব কোণ করে রয়েছে একটি
রাসমঞ্চ। বন্দ্যোপাধ্যায়দের তৈরি এই রাসমঞ্চ আকৃতিগত দিক থেকে অষ্টকোনাকার ও উচু
একটি ভিত্তিবেদীর উপর প্রতিষ্ঠিত। রাসমমঞ্চটি প্রতিষ্ঠা করেন যাদবেন্দ্র
বন্দ্যোপাধ্যায়, সময়কাল ১৭৫৪ শকাব্দ অর্থাৎ ইংরেজিতে ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দ ও বাংলায়
১২৩৯ বঙ্গাব্দ। রাসমঞ্চের প্রতিটি প্রবেশপথের দু’পাশে রয়েছে দ্বারপালিকার মূর্তি।
তবে বর্তমানে এই মূর্তিগুলির অবস্থা শোচনীয়ে, প্রতিটি দ্বারপালিকার মূর্তি মস্তকবিহীন,
যেন রাসমঞ্চ থেকে সেগুলি তুলে ফেলার জন্য যেখানে সেখানে আঘাত করা হয়েছে।
 |
বন্দ্যোপাধ্যায়দের কাছারিবাড়ি (চিত্র ১) |
 |
বন্দ্যোপাধ্যায়দের কাছারিবাড়ি (চিত্র ২)
|
 |
রাসমঞ্চ |
.............................. মন্দিরময় পাথরা এই পর্যন্তই। অনেক
বাঁধা-বিপত্তি, ঝড়ঝাপটা কাটিয়ে পাথরার এই মন্দিরগুলি টিকে রয়েছে শুধুমাত্র মহম্মদ
ইয়াসিন পাঠানের উদ্যোগে। আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে শুরু হয়েছিল যে লড়াই তার ফলস্বরূপ
আমরা এখন পাথরার এই মন্দিরগুলি ছুঁয়ে দেখতে পারি। ইয়াসিন পাঠান যদি একক উদ্যোগে
পাথরার এই মন্দিরগুলি বাঁচানোর উদ্যোগ না নিতেন তাহলে হয়তো মন্দিরের কিছুই অবশিষ্ট
থাকতো না। ইয়াসিন পাঠানের কথায় পাথরার এই মন্দিরগুলি রক্ষার্থে সর্বপ্রথম সাথে পেয়েছিলেন
পরিব্রাজক পুরাতত্ত্ববিদ তারাপদ সাঁতরা মহাশয় কে, যার সান্নিধ্যে এসে এই প্রাচীন
মন্দিরগুলি সম্বন্ধে তথ্য সংগ্রহ করতে শুরু করেন। এছাড়াও সঙ্গে পেয়েছিলেন তাঁর
গ্রাম হাতিহলকা ও পাথরা গ্রামের সমস্ত ধর্মের মানুষকে। হিন্দু-মুসলিম-আদিবাসী সাম্প্রদায়িক
সম্প্রীতি ও ঐক্যের মেলবন্ধনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তিনি। শুরুটা
হয়েছিল ১৯৯২ সালের ৫ ই ডিসেম্বর যখন আনুষ্ঠানিকভাবে পাথরার মন্দিরগুলি সংরক্ষণের
সূচনা হয়, আর ঠিক ওই বছরই পরের দিন অর্থাৎ ৬ ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ধবংস হয়...............
******************************************************
লেখা, গবেষণা ও ছবি - প্রীতম নস্কর
ই-মেল - pritamnaskar.pn@gmail.com
ব্লগটি ভালো লেগে থাকলে ব্লগের লিঙ্ক শেয়ার করতে পারেন, তবে পূর্বানুমতি ছাড়া আমার তোলা আলোকচিত্রগুলি এবং ব্লগের রচনাগুলি অন্য কোথাও কপি-পেস্ট বা বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা চলবে না।
******************************************************
গুগল ম্যাপ / কোঅরডিনেট -
কীভাবে যাবেন –
- ট্রেনযাত্রা – পাথরার নিকটবর্তী স্টেশনের মধ্যে
পরে মেদিনীপুর স্টেশন। হাওড়া থেকে মেদিনীপুর লোকালে চেপে স্টেশন পৌছাতে সময় লাগবে প্রায়
সাড়ে তিন ঘণ্টা। মেদিনীপুর স্টেশনে নেমে দু’রকম ভাবে পাথরা যাওয়া যায়। এক, মেদিনীপুর স্টেশন
থেকে টোটো বা অটো রিজার্ভ করে সোজা পাথরার মন্দির অথবা দুই, মেদিনীপুর স্টেশন থেকে
অটো/টোটো করে প্রথমে আমতলা মোড়। আমতলা মোড় থেকে হাতিহলকা যাওয়ার শেয়ারের অটো ধরে
হাতিহলকা গ্রাম, সেখান থেকে মিনিট পনেরো হাঁটা পথে পাথরা।
তথসূত্র -
- অবহেলিত পুরাকীর্তির প্রাচুর্যঃ পাথরার
দেবদেউল – তারাপদ সাঁতরা (দেশ পত্রিকা)
- পুরাকীর্তি সমীক্ষাঃ মেদিনীপুর – তারাপদ সাঁতরা
- সাক্ষাৎকার – প্রমিতকথন – ইয়াসিন পাঠান
- রিসার্চ জার্নাল – পাথরার মন্দির টেরাকোটা – তনয়া মুখার্জী
- পাথরার মন্দির নিয়ে লেখা - তিলক
পুরকায়স্থ
- বাংলার মন্দির শিল্পশৈলী (অন্ত্য
মধ্যযুগ) – নীহার ঘোষ
- বাংলার মন্দির স্থাপত্য ও ভাস্কর্য – প্রণব রায়
কয়েকদিন আগেই ঘুরে এসেছি পাথরা। বড় আফশোস, যাওয়ার আগে নজরে আসেনি এত বিস্তৃত বর্নণাসহ ব্লগটি।
ReplyDeleteএই নির্ভরযোগ্য ব্লকটির বহুল প্রচার হলে প্রকৃত কৌতুহলী ভ্রমণার্থীরা বিশেষ লাভবান হবেন।
দুঃখের শ্রীইয়াসিন পাঠানের কোন উল্লেখ ব্যানার্জী বা ঘোষাল, কোনও মন্দিরগুচ্ছে দেখতে পাই নি।
খুব সুন্দর তথ্য পূর্ণ বর্ননা।
ReplyDeleteখুব তথ্য পূর্ণ বর্ননা।
ReplyDelete