আন্দুল রাজবাড়ির ইতিহাস, হাওড়া । The History of ANDUL RAJBARI, Howrah

আন্দুল রাজবাড়ির ইতিহাস, হাওড়া ।  The History of ANDUL RAJBARI, Howrah

বিস্তীর্ণ মাঠের সম্মুখে পেল্লাই এক রাজপ্রাসাদ। যার সামনে দাঁড়ালে নিজেকে ক্ষুদ্র মনে হবে। বাংলার ইতিহাসে হারিয়ে যেতে বসা এক নদী, সরস্বতী নদী। তারই পশ্চিম পাড়ে গড়ে ওঠা প্রায় ষাট ফুট উচ্চতার এই প্রাসাদ। যার সম্মুখে প্রায় পঞ্চাশ ফুট উচ্চতার ডোরিক স্থাপত্যে গড়ে ওঠা দশটি স্তম্ভ। যা সারা বাংলায় শুধুমাত্র এই প্রাসাদটিতেই দেখতে পাওয়া যাবে। অষ্টাদশ খ্রিষ্টাব্দের শুরুর দিকে আন্দুল রাজ রাজা রাজনারায়ণ রায় প্রায় ২ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি করেন এই আন্দুল রাজবাড়ি, যার নাম আনন্দমঠকে এই রাজা রাজনারায়ণ? আর কেনই বা তৈরি করতে গেলেন এই রাজপ্রাসাদ? সেই নিয়েই আজকের এই ব্লগ।

আন্দুলঃ-

আনন্দধূলি থেকে অপভ্রংশ হয়ে বর্তমানে আন্দুল (পূর্বে আঁদুল)হাওড়া থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই আন্দুল। বর্তমানে আন্দুল হাওড়া জেলার অন্তর্গত হলেও আঠারো শতকের আগে আন্দুল ছিল হুগলী জেলার অন্তর্গত এবং তারও আগে ছিল চব্বিশ পরগণার অধীন কিন্তু একদম শুরুর দিক থেকে বিচার করলে আন্দুল যখন মুসলমান রাজত্বের অধীন তখন মজফরপুর ও বোরোপরগণার অন্তর্গত ছিল। তখন আন্দুল ছিল এক বর্ধিষ্ণু গ্রাম, যার পাশ দিয়ে বয়ে যেত বাংলার প্রাচীন সরস্বতী নদী (বর্তমানে এই নদী থাকলেও তা পরিবর্তন হয়েছে খালে, এখন যা সরস্বতী খাল)। পরবর্তীকালে আন্দুলের সীমানা বাড়তে থাকলে তার মধ্যে চলে আসে আরও অনেক গ্রাম, যার মধ্যে অন্যতম মহিয়াড়ী গ্রাম।

সরস্বতী নদী (বর্তমানে যা সরস্বতী খাল)

ব্রিটিশ আমলের শুরুর দিকে বাংলায় যে সমস্থ ধনী জমিদার শ্রেণীর উদ্ভব হয়, তাঁদের মধ্যে আন্দুলে মোটামুটি চারটি বিখ্যাত জমিদার পরিবারের বসবাস। আন্দুলের দত্ত-চৌধুরী পরিবার, কর-রায় পরিবার (যা পরবর্তীকালে হস্তান্তর হয় মিত্র পরিবারে), মল্লিক পরিবার ও মহিয়াড়ীর কুণ্ডু-চৌধুরী পরিবার। এদের মধ্যে সময়ের দিক থেকে বিচার করলে সবচেয়ে পুরনো দত্ত-চৌধুরী পরিবার, যার সূত্র ধরেই বংশানুক্রমে অন্য পরিবারগুলির সৃষ্টি। এদিকে পরবর্তীকালে আন্দুলের মল্লিক পরিবার হাওড়ার দশআনা জমিদারীর কিছু অংশ কিনে চলে আসেন। যেখানে তৈরি করেন তাঁদের কাছারিবাড়ি, যার প্রবেশদ্বার(ফটক) থেকে নামকরণ হয় হাওড়ার মল্লিকফটক। কিন্তু আজকের ব্লগ তাদেরকে নিয়ে নয়। আজকের ব্লগ আন্দুলের কর-রায় পরিবারদের নিয়ে। এই কর-রায় পরিবারই ধীরে ধীরে পরিচিতি পায় আন্দুল রাজপরিবারে।

আন্দুল রাজবাড়ির ইতিহাস, হাওড়া ।  The History of ANDUL RAJBARI, Howrah
রাজবাড়ির তোরণ

আন্দুল রাজপরিবারঃ-

সময়টা অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির উকিল হিসাবে হুগলীতে নিযুক্ত হল আন্দুলের এক যুবক। মাইনে মাসিক ২০ টাকা, উপরন্তু পিওন বাবদ ৫ টাকা ও বাড়িভাড়া বাবদ ৩ টাকা। পরে অবশ্য কাজকর্মে যুবকের উন্নতি দেখে কোম্পানি পাঠিয়ে দিলেন মুর্শিদাবাদে। বদলি হওয়ায় মাইনে বেড়ে দাঁড়াল মাসিক ৭০ টাকা ও বাড়িভাড়া-পিওন বাবদ ২৮ টাকা। ইংরাজি, ফার্সি, পার্সি জানা এই যুবক কিছুদিনের মধ্যেই সাহেবদের মন জয় করে নিল। মনে রাখতে হবে সেই সময় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সর্বেসর্বা রবার্ট ক্লাইভ। তাঁর সুনজরে এলে যুবকের পদন্নোতি হয়। উকিল থেকে সোজা কোম্পানির দেওয়ান। আর এই যুবকটিই হল আন্দুলের রামচরণ রায়। যার পূর্বপুরুষ ভুবনেশ্বর কর মুসলিম শাসনকালে রায় উপাধি লাভ করে এই কর-রায় বংশের সূচনা করেন।

টিকে থাকা জীর্ণ প্রবেশপথের কারুকার্য

১৭৫৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ শে জুন, ব্রিটিশদের সাথে সিরাজের পলাশি যুদ্ধের শুরু ও কিছুক্ষণের মধ্যেই সিরাজের পতন। আর এর সাথেই শুরু হল মুর্শিদাবাদে অরাজকতা। ক্রমে ইংরেজ সৈন্যরা একে একে সিরাজের প্রাসাদ, অস্ত্রাগার, কোষাগার অধিগ্রহণ করল। সেসময়েও মুর্শিদাবাদের দেওয়ান পদে রয়েছে আমাদের রামচরণ রায়। প্রবাদ আছে ব্রিটিশ সরকারের বিশ্বস্ত কর্মী হওয়ায় সেই রাতেই বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লার কোষাগারের অগাধ সম্পত্তি নিয়ে সরস্বতী নদী মারফৎ এসে পৌঁছালেন আন্দুলে। রামচরণের রাজভক্তি দেখে ওয়ারেন হেস্টিংস জোরহাটা গ্রাম তাঁকে নিস্কর দান করেছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি নগদ ৭২ লক্ষ টাকা, হুন্ডি ও জমিদারিতে ১৮ লক্ষ টাকা, ২৫ লক্ষ টাকা অলংকার, ৮০টি সোনা ও ৩২০ টি রুপো রেখে যান। 


পরবর্তী সময় ১৭৬৫ খ্রিষ্টাব্দ, ব্রিটিশদের হাতে বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভের পর দেশের রাজনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন হতে শুরু করল। কোম্পনির বিশ্বস্ত কর্মচারীদের পদন্নোতি ও উপরি পাওনার পথ প্রশস্ত হল। এই সময়ে কলকাতায় দ্বিতীয় বারের জন্য এলেন লর্ড ক্লাইভ। দিল্লীর সম্রাট তখন দ্বিতীয় শাহ আলমসম্রাটের ইচ্ছা কোম্পানির কিছু বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে উপাধি প্রদান করা হবে। সেইমতো লর্ড ক্লাইভ বয়স্ক রামচরণের নাম সুপারিশ করলে, রামচরণ তাঁর পরিবর্তে তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র রামলোচনের নাম পেশ করেন। শেষে লর্ড ক্লাইভের সুপারিশ অনুসারে ১৭৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ২ জানুয়ারি, দিল্লীর সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম আন্দুলের রামলোচন রায় কে রাজা উপাধিতে ভূষিত করেন এবং সঙ্গে একটি ঝালড় দেওয়া পালকি, রাস্তায় বেরুলে সামনে কাড়া-নাকড়া বাজাবার অধিকার, ৪ ফুট ৭ ইঞ্চি দীর্ঘ ও ৩ ইঞ্চি ব্যাসযুক্ত একটি কামান (যা এখন রয়েছে পাশেই অন্নপূর্ণা দেবীর মন্দিরে) এবং সর্বশেষ ৫,০০০ সৈনিকের অধিনায়কত্ব করার অধিকার প্রদান করেন। পিতা রামচরণ রায় আন্দুল রাজবংশের সূচনা করলেও মূলত রামলোচন-ই এই রাজবংশের ভিত্তি স্থাপন করেন।

টিকে থাকা জীর্ণ প্রবেশপথের কারুকার্য ২

১৭৭৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার গভর্নর হিসাবে এলেন ওয়ারেন হেস্টিং। তিনিও রামলোচনের নিষ্ঠা ও রাজভক্তিতে খুশি হয়ে তাঁকে মহিষাদল মৌজার জায়গীর দেন এবং ঝোড়হাট গ্রামটি নিষ্কর দান করেন। যদিও পরবর্তীকালে রাণীর অনুরোধে মহিষাদল মৌজার জায়গীর মহিষাদলের পুরনো অধিপতিকেই ফিরিয়ে দেন। তৎকালীন বঙ্গসমাজে রামলোচনের প্রতিপত্তির এতটাই প্রভাব বিস্তার করেছিল যে সেই সময়ে তিনি আন্দুলাব্দ নামে একটি অব্দের (বৎসর/সাল) প্রচলন করেন। কালীঘাট কালীমন্দিরের সম্মুখে সুবৃহৎ নাটমন্দির নির্মাণ করেন।

১৭৭৭ (১৭৮৭) খ্রিষ্টাব্দে রামলোচনের মৃত্যুর পর সিংহাসনে বসেন তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্র কাশীনাথ রায়। যিনি তৈরি করেন অন্নপূর্ণা দেবীর মন্দির, যা এখনও রাজবাড়ি চত্বরের পাশেই দেখতে পাওয়া যায়। ১৮০৭ (১৮১৫) খ্রিষ্টাব্দে কাশীনাথ মারা যান তাঁর একমাত্র পুত্রসন্তান রাজনারায়ণ-কে রেখে।

অন্নপূর্ণা দেবীর মন্দির

চার(ছয়) বছরের নাবালক পুত্র রাজনারায়ণ আন্দুলরাজের উত্তরাধিকারী হন স্বভাবতই রাজা সাবালক হওয়ার আগে অবধি রাজকার্য চালিত হত কোর্ট অফ ওয়ার্ডস মেনেরাজনারায়ণ ছিলেন তৎকালীন প্রসিদ্ধ হিন্দু কলেজের ছাত্র। মাতৃভাষা ছাড়াও সংস্কৃত, ইংরাজি, পার্শি, উর্দু ভাষায় ছিল অসাধারণ জ্ঞান। এছাড়াও তখনকার ইয়ং-বেঙ্গল আন্দোলনের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। সংস্কৃত সাহিত্যে অসীম দক্ষতা থাকায় পরবর্তীকালে বিভিন্ন শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতদের নিয়ে রচনা করেন কায়স্থ কৌস্তভ নামক গ্রন্থ। ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার গভর্নর লর্ড অকল্যান্ড রাজা রাজনারায়ণকে রাজ বাহাদুর উপাধিতে ভূষিত করেন এবং সেই উপলক্ষে সম্মানসূচক হিসাবে রত্নখচিত একটি তরবারি ও একটি ছুরি প্রদান করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৮৩৫ খ্রিষ্টাব্দের ১২ ই জুন ৪৬ সংখ্যক দ্যা ক্যালকাটা গ্যাজেট পত্রিকায় যে খবরটি ছাপা হয়েছিল তা হল  

The Calcutta Gazette, June 10, 1835

Fort William, 18th of May, 1835

The Honorable Governor General in council has been pleased to confer upon Baboo Raj Narain Roy Zeemindar of Undol, the Dignity and Title of Rajah and Bahadoor.

W. H. Macnaghten

Secretary of the Government of India.

বর্তমানে যা আন্দুল রাজবাড়ি নামে পরিচিত, যার আসল নাম আনন্দধাম তা আসলে এই রাজা রাজনারায়ণ রায় বাহাদুর এর সৃষ্টি। যদিও এবিষয়ে পরে আলোচনা করেছি। ১৮৪৯ খ্রিষ্টাব্দে রাজনারায়ণ রায়ের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র বিজয়কেশব রায় উত্তরাধিকারী হন। জমিদারীর ব্যাপারে বিজয়কেশব তেমনভাবে মনোযোগ দিতে পারেননিশেষ বয়সে তিনি তন্ত্র সাধনার মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করেন। বিজয়কেশবের দুই পত্নী দুর্গাসুন্দরী ও নবদুর্গা। কিন্তু তাঁদের কোন পুত্র সন্তান ছিল না। দুর্গাসুন্দরীর একটি কন্যা সন্তান হলেও, জন্মের দুবছরের মধ্যে সন্তানটি মারা যায়। তাই নিঃসন্তান অবস্থায় ১৮৭৯ খ্রিষ্টাব্দে বিজয়কেশব মারা যান।

রাজবাড়ির পশ্চিম দিকের অংশ

রাজার মৃত্যুর পর সমস্ত সম্পত্তির অধিকারী হন তাঁর দুই বিধবা রাণী। এই অবস্থায় পরবর্তী প্রজন্মের উত্তরাধিকারীর জন্য দুজনেই আলাদা আলাদা ভাবে দত্তক নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এপ্রসঙ্গে বলে রাখি, রাজবাড়ির এটর্নি নিমাইচরণ বসুর মারফৎ স্বামী বিবেকানন্দের বাবা বিশ্বনাথ দত্ত বিষয়টি জানতে পারেন। তিনি তাঁর দুই পুত্র নরেন্দ্রনাথ (স্বামী বিবেকানন্দ) ও মহেন্দ্রনাথকে দত্তক পুত্র হিসাবে গ্রহণ করার জন্য দুই রাণীর কাছে আবেদন জানান। রাণীর ইচ্ছা থাকলেও বিবেকানন্দের মা ভুবনেশ্বরী দেবী এই প্রস্তাব মেনে নিতে পারেননি। এদিকে একই রাজ স্টেটে দুই দত্তক নেওয়া আদালত মানতে পারলেন না। প্রিভি কাউন্সিলের স্পেশাল বেঞ্চ এই দত্তক-গ্রহণ অবৈধ সাব্যস্ত করেন। এদিকে বিজয়কেশবের ঠাকুরদা রাজা কাশীনাথ রায়ের কন্যা ত্রিপুরাসুন্দরীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে কৃষ্ণনগরবাসী কালীপদ মিত্রের আদালত জানতে পারে সেই বংশে রয়েছে পুত্রসন্তান, ত্রিপুরাসুন্দরীর পুত্র ক্ষেত্রকৃষ্ণ মিত্র। আদালতের আর এক আদেশে এই ক্ষেত্রকৃষ্ণ মিত্র আন্দুলের সমস্ত জমিদারীর মালিকানা পান। আর এইভাবেই আন্দুলের রায় রাজপরিবারে মিত্র পরিবারের আবির্ভাব ঘটে

রাজবাড়ির পূর্বদিকের অংশে বসবাস

রাজবাড়ির পশ্চিমদিকের অংশে বসবাস

এরপর ক্ষেত্রকৃষ্ণ মিত্রের সময়কালে আন্দুলের জমিদারীর আরও উন্নতি হতে থাকে। আন্দুল ছাড়াও অন্যান্য অনেক স্থানে মন্দির, রাস্তাঘাট, বিদ্যালয়, সেতু, হাসপাতাল প্রভৃতি জনহিতকর কাজের জন্য সাধ্যমত দান করে গেছিলেন ক্ষেত্রকৃষ্ণ মিত্র। হাওড়া টাউন হল নির্মাণে ১৫০০টাকা, সরস্বতী নদীর পুনর্নির্মাণে ৫০০টাকা, শিবপুর হনুমন্ত ঘাটে পাকা ঘর, বিভিন্ন দেবদেবী নির্মাণ। ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারা গেলে তাঁর জীবিত দুই পুত্র, জ্যেষ্ঠপুত্র উপেন্দ্রনাথ ও কনিষ্ঠপুত্র নগেন্দ্রনাথ সমস্ত সম্পত্তির অধিকারী হন (মেজো ছেলে দেবেন্দ্রনাথ ক্ষেত্রকৃষ্ণের জীবদ্দশায় মারা গিয়েছিলেন)। এরপর সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা হলে বড়তরফছোটতরফ নামে দুই ভাগ হয়ে যায়। বড়তরফ অর্থাৎ ঊপেন্দ্রনাথ ও ছোটতরফ অর্থাৎ নগেন্দ্রনাথ। ক্রমে রাজবাড়ির পূর্ব অংশে থাকতে শুরু করে বড় তরফের উপেন্দ্রনাথের পরিবার ও রাজবাড়ির পশ্চিম অংশে থাকতে শুরু করে ছোট তরফের নগেন্দ্রনাথের পরিবার। এপ্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো, ছোট তরফের এক বংশধর চলে আসেন কলকাতার কালীঘাট অঞ্চলে যেখান তাঁদের নামানুসারে রয়েছে আন্দুল রাজ রোড, হাজরা কালীঘাট। ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে উপেন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়। 

পরবর্তীকালে ১৯৫১ খ্রিষ্টাব্দে ভারত থেকে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হলে আন্দুলরাজ পরিবারও তাঁর জমিদারী হারায়। বিভিন্ন পত্রিকা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হওয়ায় আন্দুল রাজবংশ মাত্র বারো লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছিল।

ডোরিক স্থাপত্যের অনুকরণে গঠন করা ১০ টি স্তম্ভ

আনন্দধাম, আন্দুল রাজবাড়িঃ-

সরস্বতী নদীর (যা বর্তমানে পরিচিত সরস্বতী খাল) ধারে যে রাজপ্রাসাদটি আন্দুল রাজবাড়িনামে পরিচিত তার আসল নাম আনন্দধাম১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে এই রাজবাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন রাজা রাজনারায়ণ রায় বাহাদুর রাজবাড়ি সম্পূর্ণ হয় ১৮৩৪ খ্রিষ্টাব্দেপ্রায় ৬০ ফুট উঁচু এই রাজপ্রাসাদ বাংলার ইতিহাসে কিন্তু এক বিরল দৃষ্টান্ত। রাজবাড়ির সম্মুখে রয়েছে প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতার ডোরিক স্থাপত্যের অনুকরণে গঠন করা ১০ টি প্রকাণ্ড স্তম্ভ, যা সারা বাংলায় শুধুমাত্র এই প্রাসাদটিতেই দেখতে পাওয়া যাবে। স্তম্ভগুলির পরিধি এতটাই বেশি, যে কমপক্ষে তিনজন মানুষ একে অপরের হাত ধরে দাঁড়ালে তবেই একটি স্তম্ভকে পুরোপুরি বেষ্টন করা যাবে। স্তম্ভগুলি পেরোলেই বাড়ির ভিতরের এই অংশটিতে গড়ে উঠেছে নাচঘর, যাকে ঘিরে রয়েছে প্রায় ১৬ টি উঁচু স্তম্ভ। নাচঘরের দুপাশে রয়েছে তিনতলা ভবন যার প্রতিটি তলা প্রায় ২০ ফুট উঁচু। আর এই অংশেই রাজবাড়ির সদস্যরা বসবাস করত বর্তমানে এখনও তাঁদের উত্তরসূরিরা এখানে বসবাস করে আসছে।

প্রকাণ্ড স্তম্ভগুলির একটি

কিন্ত বর্তমানে রাজবাড়ির অবস্থা খুবই শোচনীয়। হেরিটেজ বিল্ডিং হিসাবে মর্যাদা পেলেও বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণে তেমন কোন ভূমিকা নেই। রাজবাড়ির বাইরের প্রকাণ্ড থামগুলি থেকে কবেই পলেস্তার খসতে শুরু করেছে। বাড়ির সামনের অংশেও রয়েছে বিশাল আবর্জনা। রাজবাড়ির ভিতরের সে নাচঘর আর নেই। উপরের খোলা ছাদ দিয়ে বৃষ্টির জল ক্রমশ পড়তে থাকে। রাজবাড়ির বর্তমান মালিক অরুণাভ মিত্র (ছোট তরফের) জানিয়েছেন এব্যাপারে প্রশাসনিক অফিসারেরা কয়েক দফা পর্যবেক্ষণ করে গেছেন, কিন্তু তা ২০১৫ সালের ঘটনা।

রাজবাড়ির এই অংশ চলে গেছে এক ক্লাবের অধীনে

সেসব এখন ইতিহাসের পাতায়। সেই রাজাও নেই আর তাদের রাজপাটও নেইকিন্তু এখনও বাংলার ইতিহাস আঁকড়ে ধরে আছে হাওড়ার বিখ্যাত এই আন্দুল রাজবাড়িকে আর রয়েছে রাজবাড়ির বিখ্যাত দুর্গাপুজো। যে দুর্গাপুজোর সূচনা করেন রাজা রামলোচন রায় আর এই দুর্গাপুজো উপলক্ষেই হাজির হয়েছিলেন তখনকার ব্রিটিশ সরকারের সর্বেসর্বা লর্ড ক্লাইভ...... তবে সে প্রসঙ্গ আজ থাক এরপরের ব্লগে থাকবে সেসব তথ্য যা দিয়ে শুরু হবে আন্দুলের দুর্গাপুজো।

******************************************************

লেখা, গবেষণা ও ছবি - প্রীতম নস্কর  

ই-মেল - pritamnaskar.pn@gmail.com

ব্লগটি ভালো লেগে থাকলে ব্লগের লিঙ্ক শেয়ার করতে পারেন, তবে পূর্বানুমতি ছাড়া আমার তোলা আলোকচিত্রগুলি এবং ব্লগের রচনাগুলি অন্য কোথাও কপি-পেস্ট বা বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা চলবে না।

******************************************************

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত পণ্ডিত শ্রী শিবেন্দ্রনারায়ণ শাস্ত্রী তাঁর 'বাঙ্গালা পারিবারিক ইতিহাস' দ্বিতীয় খণ্ডে আন্দুল রাজ পরিবারের দেওয়ান রামচরণ রায় থেকে শৈলেন্দ্রনাথ মিত্র পর্যন্ত বিশদ বিবরণ লিপিবদ্ধ করেছেন। এখানে সেই অংশটি আর্কাইভের সুবিধার্থে লিখে রাখা হল - 


 আন্দুল রাজ বংশ

হুগলীর প্রাচীন ও সন্ত্রাস্ত ভূম্যধিকারী সম্প্রদায় মধ্যে আন্দুল রাজ-বংশের নাম সসম্মানে উল্লেখ করা যাইতে পারে। নানা প্রকার জনহিতকর অনুষ্ঠান এবং দানশীলতার জন্য এই বংশ চিরদিনই বিখ্যাত। হুগলী জেলার আন্দুল রাজবংশের নাম জানে না, এমন লোক দেখিতে পাওয়া যায় না।

দেওয়ান রামচরণ রায় ও রাজা রামলোচন রায়  -

 এই বংশের প্রতিষ্ঠাতার নাম দেওয়ান রামচরণ রায়। ইনি অতি উচ্চশ্রেণীর কায়স্থ ছিলেন। ইহার বুদ্ধি ও ধীশক্তি যথেষ্ট ছিল এবং সেকালের প্রথা অনুসারে পারশী ও আরবী ভাষা উত্তমরূপে শিক্ষা করিয়াছিলেন। এতদ্ব্যতীত যৎসামান্য ইংরেজীও তিনি শিথিয়াছিলেন। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগের কিছু পূর্ব্বে ঘটনাচক্রে তিনি ইষ্ট ইন্ডিয়ান কোম্পানীর অধীনে চাকুরী গ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে মাসিক ২০ টাকা বেতনে হুগলীর উকিল পদে নিযুক্ত হন এবং তিনি বাড়ীভাড়া ও পিওনের খরচ বাবদ মাসিক ৫ টাকা পাইতেন। তথা হইতে তিনি মাসিক ৪০ টাকা বেতনে মুর্শিদাবাদে বদলী হন, এই বেতন ছাড়া তিনি পিওন প্রভৃতির খরচ বাবদ মাসিক ২৮ টাকা পাইতেন। পলাশীর যুদ্ধের সময়ে তিনি মাসিক ৬০ বেতনে দেওয়ান পদে নিযুক্ত হন। তিনি অসাধারণ পরিশ্রমী এবং কর্মী ব্যক্তি ছিলেন; কাজকর্মে তাঁহার সাধুতা দেখিয়া তাঁহার উপর কোম্পানীর খুবই বিশ্বাসের উদ্রেক হয় এবং ক্রমে লর্ড ক্লাইভের দৃষ্টি তাঁহার উপর পড়ে। মুন্সী নবকৃষ্ণের মত লর্ড ক্লাইভ ও হেষ্টিংশের তিনি অত্যন্ত বিশ্বাসভাজন ছিলেন। পলাসীর যুদ্ধের পরে ভারতের রাজনীতিক অবস্থার পরিবর্তন হয় এবং ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানী প্রকৃত পক্ষে এ দেশের হর্তাকর্তা বিধাতা হইয়া পড়েন। সেই সঙ্গে কোম্পানীর বিশ্বাসভাজন দেশীয় কর্মচারীদিগের উন্নতি ও অভ্যুদয়ের পথও খুলিয়া যায়। দেওয়ান রামচরণ রায়ের সৌভাগ্যের শুভসূচনা এখন হইতেই আরম্ভ হইল এবং কোম্পানীর নিকট ক্রমেই তাহার প্রভাব প্রতিপত্তি ও সম্মান বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। ক্লাইভ প্রথমবার বিলাতে চলিয়া যাইলে তিনি কোম্পানীর চাকুরী ত্যাগ করিয়াছিলেন কি না তাহা জানা যায় না। তবে এরূপ প্রকাশ যে, যখন ক্লাইভ লর্ড উপাধিতে ভূষিত হইয়া বাঙ্গালার শাসনকর্তারূপে দ্বিতীয়বার কলিকাতায় পদার্পণ করেন সেই সময়ে দেওয়ান রামচরণ রায় আসিয়া আবার তাঁহার দেওয়ান নিযুক্ত হন। লর্ড ক্লাইবের এদেশে অনুপস্থিত-কালে বক্সার যুদ্ধ ঘটিয়াছিল। দিল্লীর সম্রাট শাহ আলমের সহিত একযোগে অযোধ্যার নবাব বিহার আক্রমণ করিতে আসিয়াছিলেন; ইংরেজ সেনাপতি মেজর মনরো ১৭৬৪ খ্রীষ্টাব্দের ২৩শে অক্টোবর তারিখে তাঁহাদিগকে এই যুদ্ধে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করেন। বক্সার যুদ্ধে ইংরেজদের তেমন লাভ হয় নাই।

লর্ড ক্লাইভ ১৭৬৫ খৃষ্টাব্দের ৩রা মে তারিখে কলিকাতায় উপস্থিত হন এবং ঐ বৎসরেরই আগষ্ট মাসের ১২ই তারিখে সম্রাট শাহ আলম একটা ফরম্যানে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানীকে বাৎসরিক ২৬ লক্ষ টাকা রাজস্বে বাঙ্গালা, বিহার ও উড়িয়ার দেওয়ান নিযুক্ত করেন। ইহার অল্প দিন পরে সম্রাট শাহ আলম লর্ড ক্লাইভকে আরও তুষ্ট করিবার অভিপ্রায়ে তাঁহার কতিপয় কর্মচারীকে যথাযোগ্য উপাধি প্রদানে সম্মানিত করিবার ইচ্ছা জ্ঞাপন করেন; সেই সময়ে লর্ড ক্লাইড দেওয়ান রামচরণ রায়কে উপাধি দিবার জন্য সুপারিশ করিতে চাহেন। কিন্তু তিনি বিনয়ের সহিত লর্ড ক্লাইভকে জ্ঞাপন করেন যে, তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র রামলোচন রায় সম্রাটের প্রদত্ত উপাধি লাভের যোগ্য ব্যক্তি। লর্ড ক্লাইড তাঁহার দেওয়ানের প্রার্থনা মঞ্জুর করিলেন এবং সম্রাট শাহ আলমের নিকট রামলোচন রায়ের নাম সুপারিশ করিয়া পাঠাইলেন। সম্রাট রামলোচনকে "রাজা" উপাধি দান করিলেন এবং লর্ড ক্লাইডও উহার অনুমোদন করিলেন। ইহা ব্যতীত রামলোচনকে সশস্ত্র ৫০০০ পাঁচ হাজার সৈনিকের অধিনায়কত্ব করিবার ও ঝালর দেওয়া পাল্কী ব্যবহার করিবার অধিকার প্রদত্ত হইল এবং তিনি যখন পথে বাহির হইবেন তখন তাঁহার অগ্রে অগ্রে কাড়া-নাগড়া বাজিবে এইরূপ হুকুমও সম্রাট্ দিয়াছিলেন। এই উপলক্ষে একটা কামান আন্দুলরাজবংশের অধিকারে আসে; উহার দৈর্ঘ্য ফিট ৭ ইঞ্চি উহার মুখ গহ্বরের ব্যাস ৩ ইঞ্চি। এই কামান রাখিবার অধিকার এখনও ব্রিটিশ গবর্নমেন্ট অক্ষুণ রাখিয়াছেন। রামচরণের মৃত্যু হইলে কোম্পানীর ডাইরেক্টরগণ তাহার পুত্রের নিকট সমবেদনাসূচক পত্র প্রেরণ করিয়াছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি নগদ ৭২ লক্ষ টাকা, হুণ্ডী ও জমিদারীতে ১৮ লক্ষ টাকা, ২৫ লক্ষ টাকার অলঙ্কার, ৮০টি সোণার ও ৩২০টি রূপার রাখিয়া যান।

রামচরণের রাজভক্তি ও কর্তব্যনিষ্ঠায় প্রীত হইয়া ওয়ারেন হেষ্টিংস জোরহাট গ্রামটা তাঁহাকে নিষ্কর দান করেন। মীরজাফরের প্রথম শাসনকালে তাঁহাকে কোলাড়া ও অন্যান্য গ্রাম এবং তালুক এবং কাশিম আলি খাঁর শাসনকালে তাহাকে পরগণা দেওয়া হয়। তিনি বিস্তর টাকা উপার্জন করিয়াছিলেন; কিন্তু তাঁহার অধিকাংশই তিনি নানাপ্রকার সদহুষ্ঠানে ও ধর্মকর্মে ব্যয় করেন। সামরিক মর্য্যাদা হিসাবে রাজা রামলোচন বাঙ্গালার নবাব নাজিমের আদেশাহুবর্তী ছিলেন। রাজা রামলোচন রায় বিদ্যোৎসাহ ও শিক্ষানুরাগী ছিলেন। লর্ড হেষ্টিংস্ তাঁহাকে মহিষাদল মৌজা জায়গীর স্বরূপ প্রদান করেন; কিন্তু রাজা রামলোচন তাহা রাণীর আবেদনানুসারে মহিষাদল অধিপতিকেই পুনরায় প্রত্যর্পণ করেন । তিনি প্রত্যেক পর্ব্ব ও সকল ক্রিয়া কর্ম উপলক্ষে পণ্ডিত-গণকে এবং টোলে ও চতুষ্পাঠীতে অর্থ সাহায্য করিতেন। তদ্ব্যতীত তিনি তাঁহার প্রজাবৃন্দকে আয়ুর্ব্বেদীয় ঔষধ দান করিতেন। তিনি সরস্বতী নদীর তীরবর্তী আন্দুল গ্রামে বসবাস স্থাপন করেন। যে সময় তিনি আন্দুল সহরে বাসস্থান নির্মাণ করেন, সেই সময়ে সরস্বতী নদী 'বহতা' ছিল, বড় বড় নৌকা উহার উপর দিয়া যাতায়াত করিত। সরস্বতী পৰিত্ৰ নদী, নিম্নবঙ্গে ভাগীরথীর ন্যায় উহার জল পবিত্র বলিয়া খ্যাত। এখন সরস্বতী নদী মজিয়া গিয়াছে।

সমাজে রামলোচনের এতদূর প্রভূত প্রতিপত্তি ছিল যে, তিনি "আন্দুলাব্দ" নামে একটা অব্দের প্রচলন করেন। বর্তমানে ঐ অব্দের ১৪৬ বৎসর চলিতেছে। কালীঘাটে কালীমন্দিরের সম্মুখবর্তী সুবৃহৎ নাটমন্দির তিনিই নির্মাণ করিয়া দিয়াছিলেন। ১৭৮৭ খ্রীষ্টাব্দে রাজা রাম লোচনের মৃত্যু হইলে তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র কাশীনাথ রায় তাঁহার বিপুল সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন।

১৭০১ খ্রীষ্টাব্দে ভান্সিটার্ট সাহেব কলিকাতার গবর্ণর নিযুক্ত হন। তিনি রাজা রামলোচনকে তাঁহার দেওয়ান নিযুক্ত করেন। তাঁহার জীবনের শেষভাগে তিনি কলিকাতা পাথুরিয়াঘাটা অঞ্চলে বসবাস করিয়াছিলেন। ১৭৮৭ খৃষ্টালে তাঁহার মৃত্যু হইয়াছিল। রাজা রামলোচন ও ব্রিটিশ গভর্ণমেন্টকে প্রভূত সহায়তা করিয়াছিলেন। নন্দকুমারের বিচারের সময়ে তিনি গভর্ণমেন্টের পক্ষের প্রধান সাক্ষী ছিলেন। ১৭৬৬ খ্রীষ্টাব্দের ১০ই আগষ্ট ভারিখে সিলেক্ট কমিটার সভায় রণতরী বিভাগের হিসাব সম্বন্ধে রাজা রাম রামলোচনের জবানবন্দী গৃহীত হইয়াছিল। ১৭৬৪ খ্রীষ্টাব্দের ২২শে ফেব্রুয়ারী তারিখের এক পত্রে কোম্পানীর কোর্ট অফ ডাইরেক্টর নন্দকুমার সম্বন্ধে নিম্নরূপ মন্তব্য প্রকাশ করেন:- "নন্দকুমারের মামলা সম্বন্ধীয় কাগজপত্র পাঠ করিয়া আমাদের ধারণা জন্মিয়াছে যে, তিনি নিঃসন্দেহ জাল করিয়াছিলেন এবং রামচরণের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনিয়াছিলেন। ১৭৬৫ খ্রীষ্টাব্দের জুন মাসের ১৭ তারিখে জন জনষ্টোন সাহেব তাঁহার মন্তব্য পুস্তকে লিখিয়াছিলেন – রামচরণ যে ভাবে কর্তব্য সম্পাদন করিয়াছিলেন, তাহাতে কোম্পানীর কর্তৃপক্ষ ও লর্ড ক্লাইড সন্তুষ্ট হইয়াছিলেন।

রাজা কাশীনাথ রায় - 

রাজা রামলোচনের যখন মৃত্যু হয়, তখন রাজা কাশীনাথের বয়স মাত্র এক বৎসর। কাছেই তাঁহার মাতা রাণী সখী সুন্দরী তাঁহার পিতৃব্য পুত্র রাজচন্দ্র রায় ও শিবচন্দ্র রায় তাঁহার অভিভাবক হন। রাজা কাশীনাথ অতীব বিনয়ী, শিষ্টাচারপরায়ণ এবং বিবিধ সদ্‌ গুণের অধিকারী ছিলেন। পিতৃ-পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া তিনিও সংস্কৃত ও পারস্য ভাষায় সুপণ্ডিত ব্যক্তিগণকে উৎসাহ দান করিতেন। বহু ব্রাহ্মণকে তিনি ভূমিদান করিয়াছিলেন। আন্দুল-র অন্নপূর্ণা দেবীর সুদৃশ্য মন্দিরটী তিনিই নির্মাণ করাইয়াছিলেন। ১৮১৫ খ্রীষ্টাব্দে ইহার মৃত্যু হইলে ইহার পুত্র রাজনারায়ণ আন্দুলের সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হন। পিতার মৃত্যুকালে রাজা রাজ নারায়ণের বয়স মাত্র ৬ বৎসর; কাজেই যতদিন তিনি সাবালকত্ব না পাইয়াছিলেন ততদিন কোর্ট অব ওয়ার্ডস্, তাহার জমিদারী চালাইয়াছিলেন।

রাজা রাজনারায়ণ রায় -

তিনি হিন্দু কলেজে অধ্যয়ন করিয়াছিলেন। সংস্কৃত ভাষায় তাঁহার প্রভৃত অধিকার ছিল। কায়স্থজাতির উন্নতিকর সকল আন্দোলনেই তিনি যোগদান করিতেন ও সামাজিক মর্য্যাদার হিসাবে কায়স্থগণ যে ঠিক ব্রাহ্মণেরই পরবর্তী, ইহা তিনি বলিতেন; এবং সমাজে এই অধিকার বজায় রাখিবার জন্য তিনি শক্তিনিয়োগ করিয়াছিলেন। তাহার ফলে কায়স্থগণের প্রতিপত্তি যথেষ্ট বর্ধিত হইয়াছিল। তিনি কতিপয় শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ডিতের সহযোগিতায় "কায়স্থ কৌস্তুভ" নামক একখানি গ্রন্থ রচনা করেন। সেই গ্রন্থে কায়স্বজাতি যে ক্ষত্রিয় এবং তাহাদের যে উপবীত ধারণের অধিকার আছে ইহা তিনি সপ্রমাণ করেন। আন্দুলে তাঁহার পুত্রের বিবাহে তিনি কুশণ্ডিকা করিয়াছিলেন। তাঁহার অতি তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ছিল এবং তিনি আন্দুল রাজবংশের গৌরব বর্দ্ধনের জন্ম তাঁহার শক্তি সমস্ত প্রয়োগ করিয়াছিলেন। সঙ্গীত বিদ্যায় তাঁহার অনুরাগ ছিল এবং যাঁহারা সঙ্গীত শাস্ত্রের আলোচনা করিতেন তিনি তাঁহাদিগকে প্রভূত উৎসাহ প্রদান করিতেন। দিল্লী, লক্ষ্ণৌ, এবং গোয়ালিয়র হইতে যে সকল গীত-বাদ্যের কালোয়াৎ তখন বাঙ্গালা দেশে আসিতেন, তিনি তাঁহাদিগকে আন্দুলে নিমন্ত্রণ করিতেন। আন্দুলের গীতবাদ্যের মজলিস উপভোগ করিবার সামগ্রী ছিল। প্রত্যেক মজলিসেই কলিকাতার সামান্য একটু নামওয়ালা সঙ্গীতজ্ঞ পর্যন্ত নিমন্ত্রিত হইতেন। তাঁহার বাটীতে যে সকল নিমন্ত্রিত আসিতেন তাঁহাদিগকে মুসলমান আদব কায়দার হিসাবে পায়জামা, চাপকান, কাবা, কোমরবন্ধ ও পাগড়ী পরিধান করিতে হইত।

রাজা রাজনারায়ণ নিজে যেমন সংস্কৃতজ্ঞ ছিলেন, সেইরূপ সংস্কৃত বিদ্যার আলোচনায় উৎসাহ দান করিতেন। প্রসিদ্ধ অলঙ্কার শাস্ত্রবিদ ও কবি বঙ্গবিশ্রুত পণ্ডিত প্রেমচাদ তর্কবাগীশকে তিনি "আদুল রাজ প্রশস্তি" নামক মৌলিক কাব্যগ্রন্থ রচনা করিতে অনুরোধ করিয়াছিলেন। তর্কবাগীশ মহাশয় কয়েকটা কবিতা রচনাও করেন, কিন্তু রাজা রাজনারায়ণের মৃত্যু ঘটায় এই রচনা অসম্পূর্ণ থাকিয়া যায়। লর্ড অকল্যাও এদেশের শাসনকর্তা হইয়া আসিবার অল্পদিন পরেই রাজা রাজনারায়ণ তাঁহার সহিত পরিচিত হন। ১৮৩৫ খৃষ্টাব্দে লর্ড অকল্যাণ্ড তাঁহার 'রাজা বাহাদুর' উপাধির অনুমোদন করেন এবং তাহাকে তাঁহার মর্য্যাদার উপযোগী সম্মানসূচক এক প্রন্থ পরিচ্ছদ এবং রত্নখচিত একটি তরবারি ও ছুরিকা প্রদান করেন। তখনকার সময়ে এইরূপ উপঢৌকন বিশিষ্ট সম্মানের পরিচায়ক ছিল এবং সমাজে বিশিষ্ট প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তি ব্যতীত অপর কেহ এমন উচ্চ মর্যাদাজনক উপঢৌকন পাইবার অধিকারী বলিয়া বিবেচিত হইতেন না।

১৮৩৫ খৃষ্টাব্দের জুন মাসের ৪৬ সংখ্যক "কলিকাতা গেজেটে" নিম্নলিখিত ঘোষণা বাহির হইয়াছিল।

Fort William, 18th May, 1835

The Honourable Governor-General in Council has been pleased to confer upon Babu Raj Narain Roy, Zeminder of Andul, the dignity and title of Raja and Bahadur,

(sd) W. H. Macnaighton,

Secretary to the Government of India.

তাঁহার পিতামহ ও পিতার ন্যায় তিনি ব্রিটিশ গবর্মেন্টের অনুরাগী এবং রাজভক্ত ছিলেন। মিথিলাও বারাণসীর কয়েকজন বিশিষ্ট পণ্ডিতকে তিনি সভাপণ্ডিত করিয়াছিলেন। তিনি একটা চতুষ্পাঠীর প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাহার ভার একজন প্রসিদ্ধ অধ্যাপকের হস্তে ন্যস্ত করেন। তাঁহার সময়ে আন্দুল সংস্কৃতালোচনার জন্য প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং লোকে আন্দুলকে "দক্ষিণ বঙ্গের নবদ্বীপ” বলিয়া অভিহিত য়ী করিয়া থাকে। প্রসিদ্ধ সংস্কৃতশাস্ত্রবিং পণ্ডিত এবং যোগ-সাধক ভৈরবচন্দ্র বিদ্যাসাগর আন্দুলকে গৌরবান্বিত করিয়াছিলেন। স্বতি, নায়, কাব্য ও দর্শনে তাহার বিশিষ্ট অধিকার ছিল। একবার নবদ্বীপের এক বিরাট ধর্ম সভায় তিনি আহূত হইয়াছিলেন। সেই সভায় ভারতবর্ষের বিভিন্ন বিদ্যাপীঠের পণ্ডিতমণ্ডলীর সমাবেশ হইয়াছিল। সেই সভায় যে বিচার হয় তাহাতে আন্দুলের পণ্ডিত ভৈরবরচরণ দর্শন ও অন্যান্য শাস্ত্রে আমন্ত্রিত সমগ্র পণ্ডিতকে পরাজিত করিয়া বিজয়-গৌরব লাভ করেন এবং আন্দুলের নাম ভারতের বিদ্যাপিঠ সমূহে পরিব্যাপ্ত হইয়া পড়ে। বারাণসী প্রভৃতি স্থানের পণ্ডিতগণ রাজা রাজনারায়ণ রায় বাহাদুরের নিকট নিম্নমিত বৃত্তি পাইতেন। জন সাধারণের হিতকর অনুষ্ঠান- সমূহেও তিনি অর্থ সাহায্য করিতেন। তিনি স্বীয় জমিদারীর ভিতর বিস্তর পুষ্করিণীর প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন, বহু পথ নির্মাণ করিয়া দিয়াছিলেন। আদুল হইতে ভাগীরথীর তীরবর্তী রাজগঞ্জ পর্যন্ত পথ তাহারই অর্থে ও উদ্যোগে নির্মিত হইয়াছিল। তিনি জমিদারীর কাজকর্ম ও বিষয় সম্পত্তি পরিদর্শনের কার্য্য খুব ভালরূপই জানিতেন; এইজন্য তাহার সময়ে আন্দুলের রাজপরিবারের জমিদারী ও আয় ৰথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পাইয়াছিল। তাঁহার নির্মিত আঙ্গুল রাজ প্রাসাদের দরবার হল স্থাপত্য সৌন্দর্য্যে বাঙ্গালার উল্লেখযোগ্য আসন অধিকার করিয়াছে। তাঁহার মৃত্যুর সময় দেশীয় ও ইউরোপীয় উভয় সম্প্রদায়ের লোকেই শোক প্রকাশ করিয়াছিলেন।

রাজা বিজয় কেশব রায় - 

রাজা রাজ নারায়ণের মৃত্যুর পর রাজা বিজয় কেশব রায় সিংহাসনের অধিকারী হন। তাঁহার পিতার যখন মৃত্যু হয় তখন তাঁহার বয়স মাত্র তের বৎসর। কাজেই তাঁহার মাতা রাণী মহোদয়া ও ক্ষেত্রকৃষ্ণের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা প্রাণকৃষ্ণ মিত্র মহাশয়া নাবালক রাজার অভিভাবক হিসাবে জমিদারীর কার্য্য পরিচালনা করেন। ১৮৮৪ খ্রীষ্টাব্দে বিজয় কেশবের বিধবা স্ত্রা রাণীনবদুর্গা ও দুর্গা সুন্দরী দত্তক লইয়া মোকদ্দমা করিলে মি: জে-সি ম্যাগ্রেনর জমিদারীর রিসিভার নিযুক্ত হন। ইনিও সংস্কৃত ভাষার অনুরাগী ছিলেন এবং পণ্ডিতগণকে মুক্ত হস্তে অর্থদান করিতেন। তিনি অতুল ঐশ্বর্য্যের অধিকারী ছিলেন বটে, কিন্তু তাঁহার অন্তর বৈরাগ্য- পরায়ণ ছিল। তিনি প্রায়ই একাকী থাকিয়া পরমার্থ চিন্তায় ব্যাপৃত থাকিতেন। শেষ বয়সে সাধু সন্ন্যাসী ও পণ্ডিতগণের সহিত কালযাপন করিতেন। ইনি নিঃসন্তান অবস্থায় ১৮৭৯ খ্রীষ্টাব্দে পরলোক গমন করিলে ইহার হুই বিধবা পত্নী সম্পত্তির অধিকারিণী হন। শেষে দুই বিধবা পত্নীই দত্তক গ্রহণ করেন; কিন্তু একত্র দুই দত্তক গ্রহণ করা হিন্দু ব্যবহার শাস্ত্রের বিরুদ্ধ কার্য্য হইয়াছে বলিয়া অনেকে মত প্রকাশ করিলে কলিকাতা হাইকোর্টে মামলা উপস্থিত হয়। সেই মামলা প্রিভি কৌন্সিল পর্যন্ত চলে। পরে প্রিভি কৌন্সিলের বিচারপতিগণ দুই দত্তককে অবৈধ বলিয় সিদ্ধান্ত করিলে রাজা কাশীনাথের দৌহিত্র ক্ষেত্র কৃষ্ণ মিত্র আন্দুল রাজবংশের অধিকারী সাব্যস্ত হন।

রাজা ক্ষেত্র কৃষ্ণ মিত্র -

ক্ষেত্রকৃষ্ণের পিতার নাম বাবু কালীপদ মিত্র। ইহারা বঁড়িশা সমাজের সম্ভ্রান্ত মুখ্য কুলীন; হুগলী জেলার কোন্নগরে আসিয়া বসবাস স্থাপন- করিয়াছিলেন। রাজা কাশীনাথ রায় কালীপদ মিত্রের সহিত তাঁহার কন্যার বিবাহ দিয়াছিলেন। কালীপদ বাবু রাজা কাশীনাথের নিকট হইতে বিস্তর ভূসম্পত্তি এবং একটা উৎকৃষ্ট বসত-বাটী যৌতুক স্বরূপ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। ক্ষেত্র কৃষ্ণ উদার হৃদয় ও দানশীল ব্যক্তি ছিলেন। এই জন্য তাঁহার দেশবাসী তাঁহাকে "রাজা ক্ষেত্রকৃষ্ণ মিত্র" বলিয়া সম্ভাষণ করিত। এই সময়ে বহুদিনব্যাপী মোকদ্দমায় আন্দুল রাজবংশকে বিস্তর অর্থব্যয়জনিত ক্ষতি ভোগ করিতে হয়। রাজা ক্ষেত্র কৃষ্ণ খুব হিসাবী লোক ছিলেন; তিনি অপব্যয় নিবারণ করিয়া জমিদারীর আয়-বৃদ্ধি কল্পে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু যে ব্যাপারে দশের কল্যাণ হইবে জানিতে পারিতেন সে ব্যাপারে তিনি মুক্ত হস্তে অর্থব্যয় করিতেন। তাঁহার দানের তালিকা দেখিলেই তাঁহার হৃদয় যে কত বড় ছিল তাহা বুঝা যায়। তিনি উলুবেড়িয়ার কলেরা হাসপাতালে এককালীন অনেক টাকা দিয়াছিলেন এবং মাসিক অর্থ সাহায্য করিতেন। উলুবেড়িয়া গবর্মেন্ট স্কুলে তাঁহার মাসিক অর্থ সাহায্য নির্দিষ্ট ছিল এবং খুলনার আমাদি মধ্যবাঙ্গালা বিদ্যালয়ে তিনি বার্ষিক সাহায্য করিতেন। হুগলীর ডফারিণ হাসপাতালে তিনি বহু টাকা দান করেন। হাবড়ার তদানীন্তন ম্যাজিস্ট্রেট মিঃ গ্রিয়ারসনের অনুরোধে তিনি আন্দুলে সরস্বতী নদীর সেতুটি পুনর্নির্মিত করাইয়া দেন এবং এই কার্য্যে তাঁহার ৫০০০ টাকা ব্যয় হয়। প্রত্যহ প্রায় ৫০০০ লোক এবং অনেক গরু ও বাছুর ও গো-শকট এই সেতু দিয়া যাতায়াত করিয়া থাকে। ইনি আন্দুল রাজগঞ্জ রোড অনেক টাকা খরচ করিয়া পাকা করিয়া দেন এবং এজন্য এই অঞ্চলের অধিবাসিগণের প্রভূত উপকার হয়। ইহাতে ৮০০০. টাকা খরচ হয়। এতদ্ব্যতীত আন্দুলে একটা অবৈতনিক, উচ্চ ইংরেজী বিদ্যালয় মাসিক ৫০০ টাকা ব্যয়ে প্রায় পাঁচবৎসর কাল চালাইয়াছিলেন। এই স্কুলটির নাম ছিল- "আন্দুল জুবিলী স্কুল।" এই স্কুল প্রতিষ্ঠায় তাঁহার ৩০ হাজার টাকা খরচ হইয়াছিল। প্রকাশ, মহামহোপাধ্যায় স্বর্গীয় মহেশ্চন্দ্র ন্যায়রত্বের অনুরোধে তিনি এই স্কুলটি উঠাইয়া দেন; কারণ ন্যায়রত্ন মহাশয় বলেন যে আপনার এই অবৈতনিক স্কুলটার জন্য মহিয়াড়ীর গবর্মেন্ট সাহায্য প্রাপ্ত স্কুলটার বিস্তর ক্ষতি হইতেছে। আন্দুলের রাজবাটীর ঠাকুর বাড়ীতে শতশত শিবমূর্ত্তি, স্বপ্নপূর্ণা দেবীর মূর্ত্তি এবং নাড় গোপালের মুর্তি বিদ্যমান; ইহাদের পূজার জন্য বার্ষিক ৪০০০ টাকা নির্দিষ্ট আছে; তাহার উপর প্রতি বৎসরই দুর্গা পূজার জন্য বার্ষিক ৩৫০০ টাকা ব্যয় হইয়া থাকে। পূজার নৈবেদ্য ও প্রসাদ ব্রাহ্মণ ও দরিদ্র ব্যক্তিগণকে বিতরণ করা হয়। জোড়হাট মৌজার জমিদারীর আয় হইতে এই সকল পূজার ব্যয় নির্ব্বাহ হইয়া থাকে। আন্দুল বাজারের আয় হইতে 'সদাব্রত' প্রত্যহ সাধু ও দরিদ্র নারায়ণের সেবার ব্যবস্থা আছে।

শিবপুরের হুনুমন্ত ঘাটে একটা প্রশস্ত ইষ্টক প্রাচীর বেষ্টিত স্থান ও তৎসংলগ্ন কয়েকখানি পাকা ঘর আন্দুল রাজবংশ কর্তৃক শিবপুর ও তিন্নিকটবর্তী গ্রামসমূহের অধিবাসীদিগকে শ্মশানঘাটরূপে ব্যবহারের জন্য প্রদত্ত হইয়াছিল। এক্ষণে ভাগীরথী এই স্থান হইতে সরিয়া যাওয়ায় ইহা বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে কোম্পানীর দখলে আসিয়াছে। শিবপুরের হনুমন্ত ঘাটের সন্নিকটে চারিটী মন্দির আছে; সেই মন্দিরে শিবলিঙ্গ বিদ্যমান। ইহাদের পূজার জন্য আন্দুল রাজবংশ হইতে বার্ষিক ৩০০ টাকা বরাদ্দ আছে। এই টাকায় এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবার আট নয় পুরুষ প্রতিপালিত হইয়া আসিতেছেন। আন্দুল রাজবংশের বর্তমান বংশধরগণ এই মন্দির চারিটীর পূর্ণ সংস্কার করিয়া দেন। বারাণসীর দেবপুরা নামক স্থানে দুইটা সুবৃহৎ মন্দির রাজা ক্ষেত্রকৃষ্ণ নির্মাণ করাইয়া দেন। ইনি হাওড়া টাউন হল প্রস্তুতের সময় ১৫০০ টাকা দান করিয়াছিলেন।

রাজা ক্ষেত্রকৃষ্ণের তিন পুত্র এবং তিন কন্যা। জ্যেষ্ঠপুত্র কুমার উপেন্দ্রনাথ পিতার দক্ষিণ হস্তস্বরূপ ছিলেন। সকল সদনুষ্ঠানে অর্থ সাহায্য মূলে তাঁহার হাত ছিল। দ্বিতীয় পুত্রের নাম-কুমার দেবেন্দ্র নাথ ইনি এক কন্যা রাখিয়া পিতার জীবদ্দশায় পরলোকগমন করেন। কনিষ্ঠের নাম-কুমার নগেন্দ্রনাথ। রাজা ক্ষেত্রকৃষ্ণ মিত্র পরোপকার পরায়ণ ছিলেন এবং জনহিতকর অনুষ্ঠানে অর্থ সাহায্য করিতেন বলিয়া বাঙ্গলার ভূতপূর্ব্ব ছোটলাট স্যর আলেকজাণ্ডার মেকেঞ্জি বাহাদুর তাঁহাকে ভারত সম্রাজ্ঞীর নামে এক প্রশংসাপত্র প্রদান করেন। মূল পত্র ও তাহার অনুবাদ নিম্নে প্রকাশিত হইল :--

June 20th 1897,

By command of His Excellency the Viceroy and Governor General, in council this certificate is presented in the name of Her Most Gracious Majesty, Queen Victoria, Empress of India to Babu Kshetra Krishna Mitter, Zaminder of Andul, Howrah, in recognition of his Public spirit and liberality,

Sd A, Mackenzie,

Lieutenant Governor of Bengal,

ইহার অর্থ মহামান্য বড়লাট বাহাদুরের আদেশক্রমে এবং বিপুল রাজশ্রীমণ্ডিতা ভারত রাজরাজেশ্বরী মহারাণী ভিক্টোরিয়ার নামে হাওড়া জেলার অন্তর্গত আন্দুলের জমিদার বাবু ক্ষেত্রকৃষ্ণ মিত্রকে তাঁহার জনহিতকর অনুষ্ঠান ও দানশীলতার জন্য এই প্রশংসাপত্র প্রদত্ত হইল। (২০শে জুন, ১৮৯৭) ১৯০৭ খৃষ্টাব্দের ৪ঠা সেপ্টেম্বর ৮৫ মিত্রের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পূর্ব্বে রাজা ক্ষেত্রকৃষ্ণ এক উইল করেন। সেই উইলে লেখা ছিল যে, জ্যেষ্ঠ পুত্র সম্পত্তির তত্ত্বাবধান করিবেন ও বাড়ীর কর্তা হইবেন এবং কনিষ্ঠ তাঁহার অধীনে কাজকর্ম দেখিবেন। এইজন্য জ্যেষ্ঠ পাইবে বিষয়ের দশ আনা ও কনিষ্ঠ পাইবে ছয় আনা অংশ। কিন্তু রাজার মৃত্যুর পর এই উইল লইয়া দুই পক্ষে মামলা ৰোধে; তাহাতে আন্দুল রাজবংশের অনেক টাকা খরচ হইয়া যায়।। শেষে এই সর্ভে আপোষে মামলাটি মিটিয়া যায় যে, উভয় পক্ষই সমানভাবে সম্পত্তির অংশ পাইবেন, তবে কনিষ্ঠ জ্যেষ্ঠকে ক্ষতিপূরণ স্বরূপ কিছু অর্থ প্রদান করিবেন।

কুমার উপেন্দ্রনাথ জমিদারীর কার্য্য ভালরূপ জানিতেন; তিনি পিতার জীবদ্দশায়ই এই কর্মে কৃিতিত্ব লাভ করিয়াছিলেন। তিনি প্রায়ই জমিদারী স্বয়ং পর্যবেক্ষণ করিতেন। তাঁহার স্বভাব বড় মিষ্ট ছিল; এইজন্য প্রজারা তাঁহাকে খুবই পছন্দ করিত। ইউরোপীয় সমাজে তাহার অনেক বন্ধু ছিলেন। একবার লর্ড কিচেনার তাঁহাকে সাক্ষাৎকার দান করেন ও তাঁহার পূর্ব্বপুরুষকে প্রদত্ত রত্নখচিত তরবারিটী দর্শন করেন। লর্ড কিচেনারের একটা প্রতিমূর্ত্তি তাঁহার স্বাক্ষর সমেত আদুল রাজবাটীতে রক্ষিত আছে।

আন্দুল রাজপরিবারের সুবিস্তৃত জমীদারী দুই তরফে বিভক্ত, বড় তরফ ও ছোট তরফ। কুমার উপেন্দ্রনাথ বড় তরফের এবং কুমার নগেন্দ্রনাথ ছোট তরফের জমিদারীর মালিক। হাবড়া, হুগলী, খুলনা, বর্দ্ধমান, ২৪ পরগণা, মেদিনীপুর জেলা এবং সাঁওতাল পরগণা ও পুরী প্রভৃতি জেলার ইহাদের জমিদারী বর্তমান। ১৯০৯ খৃষ্টাব্দের ১লা জুলাই ৫২ বৎসর বয়সে কুমার উপেন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়। পাঁচপুত্র চারি কন্যা রাখিয়া ইনি পরলোক গমন করেন। ইহার পাঁচ পুত্রের মধ্যে জ্যেষ্ঠের নাম- প্রমথনাথ, দ্বিতীয়ের নাম মন্মথনাথ, তৃতীয়ের সুরথনাথ, চতুর্থের ভরতনাথ এবং কনিষ্ঠের জগৎনাথ। কুমার উপেন্দ্রনাথের মৃত্যুর সময়ে জগৎনাথ নাবালক ছিলেন। সেই জন্য তিনি মৃত্যুর পূর্ব্বে এই মর্মে উইল করিয়া যান যে, জগৎনাথ যতদিন সাৰালক না হইবেন, ততদিন বিষয় সম্পত্তি দুইজন এক্সিকিউটর তত্ত্বাবধান করিবেন। কিন্তু সাবালক হইবার পূর্ব্বে তত্ত্বাবধান ব্যাপার জগৎনাথের মাতার ও ভ্রাতাগণের অসন্তোষজনক হওয়ায় আবার হাইকোর্টে মামলা বাধে। অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ইংরেজী ১৯১৯ সালের ২রা জানুয়ারী তারিখে উক্ত মামলায়ও ভ্রাতাগণ জয়লাভ করেন। তদবধি আদুল রাজবংশের বড় তরফের বিষয় সম্পত্তি পুনরায় প্রমথ নাথ পরিদর্শন করিতেছেন। ইহার আমলে আন্দুলের ও শিবপুরের মন্দির সমূহ, পারিবারিক বাস ভবনাদি এবং বাজার সমূহের সংস্কার সাধিত হইয়াছে। ইহার চেষ্টায় বড় তরফ ও ছোট তরফের মধ্যে বহুদিনের মনোমালিন্য মিটিয়া গিয়া এষ্টেট পরিচালনের জন্য একজন ম্যানেজার (Joint manager) নিযুক্ত হইয়াছেন, ইহাতে যে রাজবংশের মর্য্যাদা অক্ষুণ্ণ থাকিবে সে বিষয় আর সন্দেহ নাই। স্বর্গীয় কুমার উপেন্দ্র নাথের বিধবা পত্নী তাহার পরলোকগত স্বামীর স্মৃতি-রক্ষাকল্পে আন্দুলে সরস্বতী নদীতীরে একটা শিবমন্দির ও শ্মশান ঘাট তৈয়ারী করাইয়া দিয়াছেন। ইহাতে তথাকার অধিবাসীদিগের প্রভূত উপকার হইয়াছে।

বাঙ্গালা ১২৯৬ সালে আন্দুল গ্রামে কুমার প্রমথনাথ মিত্রের জন্ম হয়। তিনি বরিশালে রাইরকাঠী গ্রামে সম্রান্ত মূখ্য কুলীন কায়স্থ বংশীয় বাবু ব্রজলাল বসুর তৃতীয়া কন্যাকে বিবাহ করেন। তাঁহার এক পুত্রও দুই কন্যা। কুমার প্রমথনাথ বিষয় কর্মও ভালরূপ বুঝেন এবং জমিদারীর কাজকর্ম উত্তমরূপে জানেন। তিনি উৎসাহী, উদ্যোগী, কর্মঠ; সাহিত্য, চিত্রবিদ্যা, আলোকচিত্র, সঙ্গীত, মৃগয়া, কৃষি এবং যন্ত্র বিজ্ঞানে তাহার অনুরাগ আছে। তিনি কৃষকদিগকে শিক্ষা দানের জন্য একটি আদর্শ কৃষিক্ষেত্র স্থাপন করিয়াছিলেন। তিনি আন্দুল ইউনিয়ন কমিটীর চেয়ারম্যান, আন্দুল অনাথ ভাণ্ডারের ভূতপূর্ব্ব প্রেসিডেন্ট এবং গ্রাম্য হিতকারী সমাজের প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক। তিনি পল্লীবাসিগণের কল্যাণের জন্যই এই সমিতি স্থাপন করিয়াছেন। পল্লীস্বাস্থ্য ও পল্লীশিক্ষা এবং পল্লী সমাজের উন্নতি সাধনের প্রতি ইহার বিশেষ লক্ষ্য আছে। ইহার বিশেষ উৎসাহ ও সাহায্যে আদুলের "গ্রাম্য হিতকরী বালিকা বিদ্যালয়" স্থাপিত হইয়াছে। ইনি দুঃস্থ গ্রামবাসিগণকে অর্থ সাহায্য করেন।

বাঙ্গালা ১২৯৮ সালে কুমার মন্মথনাথ মিত্রের জন্ম হয়। ইনি কলিকাতা হাইকোর্টের এটর্ণি বাবু অক্ষয় কুমার বসুর কন্যাকে বিবাহ করিয়াছেন। ইঁহার একটি মাত্র কন্যা। ইনি সঙ্গীতানুরাগী একজন দক্ষ ক্রীড়ক (Sportsman) ও মৃগয়ানুরাগী।

কুমার সুরথনাথ মিত্র ১৩০৪ বঙ্গাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। ইনি বিএ-পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া এটর্ণি আফিসে Article clerk হইয়াছেন। ইনি শোভাবাজার রাজবংশের কুমার খগেন্দ্রকৃষ্ণ দেব বাহাদুরের একমাত্র কন্যাকে বিবাহ করিয়াছেন। ইঁহার উপস্থিত ১ পুত্র।

বাঙ্গালা ১৩০৬ সালে কুমার ভরতনাথ মিত্রের জন্ম হয়। তিনি এক্ষণে প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যয়ন করিতেছেন। কুমার জগৎনাথ মিত্র বাঙ্গালা ১৩১৪ সালে জন্ম গ্রহণ করেন। ইনি এক্ষণে পাঠাভ্যাস করিতেছেন।

কুমার নগেন্দ্রনাথ মিত্র খুব সামাজিক এবং দাতা ছিলেন। তিনি গীতবাদ্যের অনুরাগী ছিলেন এবং ব্যায়াম ক্রীড়া (Sport) ভালবাসিতেন। গত ১৯১১ খ্রীষ্টাব্দে ৩৯ বৎসর বয়সে তাঁহার মৃতু হয়।

তাহার একমাত্র পুত্রের মৃত্যুর পরে সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হন-কুমার শৈলেন্দ্রনাথ মিত্র।

কুমার শৈলেন্দ্রনাথ বাঙ্গালা ১৩০০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ইনি বাখরগঞ্জ জেলার বনাগ্রামের সম্ভ্রান্ত জমিদার বংশীয় বাবু রজনীকান্ত বন্ধুর তৃতীয় কন্যাকে বিবাহ করেন। ইহার উপস্থিত দুই পুত্র ও এক কন্যা। সঙ্গীত ও কবিতার প্রতি ইহার অত্যন্ত অনুরাগ। ইনি স্বয়ং কবিতা রচনা করিতে পারেন। ইনি তাঁহার মাতার নামে "মাখন কুমারী চতুষ্পাঠী" স্থাপন করিয়াছেন, এক জন সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতের হস্তে এই চতুষ্পাঠী পরিচালনের ভার অর্পিত হইয়াছে। তিনি গ্রামের দরিদ্র পরিবারবর্গকে সাময়িক অর্থ সাহায্য করেন।

আন্দুল-রাজবংশ

১। দেওয়ান রামচরণ রায়।

২। রাজা রামলোচন রায়।

৩। রোজা কাশীনাথ রায়।

৪। রাজা রাজনারায়ণ রায় বাহাদুর।

৫! রাজা বিজয় কেশব রায়।

৬। রাজা ক্ষেত্র কৃষ্ণ মিত্র

৭। কুমার উপেন্দ্রনাথ মিত্র

৮। কুমার নগেন্দ্রনাথ মিত্র

৯। কুমার শৈলেন্দ্রনাথ মিত্র

১০। কুমার প্রমথ

১১। কুমার মন্মথ

১২। কুমার সুরথ

১৩। কুমার ভরত কুমার জগৎ


ঠিকানাঃ- 

আন্দুল রাজমঠ, আন্দুল-মৌড়ি বাজার, হাওড়া - ৭১১৩০২ 

কীভাবে যাবেনঃ-

বাসে যেতে চাইলে - রবীন্দ্রসদন থেকে অথবা হাওড়া থেকে আন্দুলগামী যেকোন বাসে উঠে নামতে হবে আন্দুল বাজার বাসস্টপ। বাসস্টপে নামার পর ঠিক রাস্তাটার বামদিকে পরবে এক সরু গলি। এই গলিতেও বর্তমানে বাজার বসে। সেই গলি ধরে কিছুটা এগোলে ডানপাশে একটি পুকুর পেরিয়ে সোজা হাঁটলেই বামদিকে পরবে রাজমঠে যাওয়ার রাস্তা। রাজমঠের সামনেই দেখতে পাওয়া যাবে এই আন্দুল রাজবাড়ি।

ট্রেনে যেতে চাইলে - হাওড়া থেকে মেদিনীপুর/পাঁশকুড়া/খড়গপুর -গামী যেকোন লোকাল ট্রেন ধরে নামতে হবে আন্দুল স্টেশন। সেখান থেকে টোটো অথবা রিকসা করে আন্দুল রাজবাড়ি / রাজমঠ। 

গুগল ম্যাপ / কোঅরডিনেটঃ-

22°34'58.6"N 88°14'07.9"E

তথ্যসূত্রঃ-

  1. হাওড়া জেলার পুরাকীর্তি তারাপদ সাঁতরা (পুরাতত্ত্ব বিভাগ - পশ্চিমবঙ্গ সরকার)
  2. হাওড়া জেলার ইতিহাস (দ্বিতীয় খণ্ড) অচল ভট্টাচার্য
  3. বাংলার খেতাবী রাজরাজরা দত্ত বিমল চন্দ্র
  4. Bengal District Gazetteers 1909 – Howrah
  5. The Calcutta Gazette – 1835
  6. Zamindars of Andul – Hemotpaul Chowdhury  

Comments

  1. ধন্যবাদ জানিয়ে ছোট করব না ,শুধু বলতে চাই আপনার এই অক্লান্ত পরিশ্রম সত্যিই অনবদ্য, আপনার জন্য এই ইতিহাসটা জানতে পারলাম। আমি মৌরিগ্রাম বসবাস করি কিন্তু সত্যিই এত বড় ইতিহাস জানতাম না।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ। ভবিষ্যতে আন্দুল নিয়ে, বিশেষ করে মহিয়াড়ী গ্রাম, জমিদারি ও আন্দুলের বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজো নিয়েও আরও কিছু ব্লগ করার ইচ্ছা আছে।

      Delete
    2. Amar bari andul a kintu
      Andul a thekeo andul rajbari bepare kichui jantam
      Aamr jene khub valo laglo

      Delete
    3. কেউ কি জানেন ওখানে গুরুবাড়ী কোথায় আছে ,যেখানে শ্রীচৈতন্য দেব এসেছিলেন ?

      Delete
  2. খুব ভালো লাগলো ❤🙏

    ReplyDelete
  3. Subhomoy bhattacherjee.12 March 2022 at 12:53

    ♥️ অসাধারণ।

    ReplyDelete
  4. রাজার নাম জানতে এসে অনেক কিছু জানতে পারলাম ভালো লাগলো।

    ReplyDelete
  5. Nice write up and pics, Thanks.

    ReplyDelete
  6. গবেষণাভিত্তিক, সুন্দর লেখনী; ঋদ্ধ হলাম; আন্দুলের ইতিহাসে আরও অনেক পরিবার রয়েছেন; আশা রাখি তাদের সমৃদ্ধির ইতিহাস উঠে আসবে আপনার পরবর্তী কোনও লেখায়। শুভেচ্ছা রইলো।

    ReplyDelete
  7. খুব ভালো লাগলো... একটা জিনিষ জানার রইল- আমি শুনেছি আন্দুল রাজবাড়ী টা খুবই লম্বা ছিল দৈর্ঘ্যে... যার শেষ অংশটা এখনও আন্দুল পোস্ট অফিসের উল্টোদিকে দেখা যায়... সেটা কি সঠিক?

    ReplyDelete
  8. খুব সুন্দর। অনেক কিছু জানলাম।😌

    ReplyDelete

Post a Comment