বাঁধাঘাট সালকিয়ায় ট্রাম, হাওড়া ।। TRAMS in BANDHAGHAT SALKIA, HOWRAH

বাঁধাঘাট সালকিয়ায় ট্রাম, হাওড়া ।। TRAMS in BANDHAGHAT SALKIA, HOWRAH

সালকিয়ায় ট্রাম!! কি বলেন মশাই কলকাতায় ট্রাম চলত থুড়ি এখনও চলে শিবপুরে ট্রাম চলত জানি তা বলে সালকিয়ায় ট্রাম??

হ্যাঁ মশাই হাওড়ার সালকিয়ায় ট্রাম চলত, তাও আবার সালকিয়ার চৌরাস্তা হয়ে হরগঞ্জ বাজারের উপর দিয়ে ট্রাম চলত। তবে খুব বেশি নয়, এইতো ৫০ বছর আগে পর্যন্ত চলত। কিন্তু এখন যদিও সেসব ইতিহাসের পাতায় তবে একসময় কলকাতার মতো এই হাওড়া-তেও যে ট্রাম চলত তার একমাত্র ইতিহাস বহন করে চলেছে ঘাসবাগান গোলাবাড়ির ডাব্লু.বি.এস.টি.সি বাস টার্মিনাল, যা একসময় ছিল ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানির ট্রামডিপো শিবপুরের শিবপুর-ট্রামডিপো, যা এখন শুধুমাত্র বাস স্টপেজ হিসাবে রয়ে গেছে আর হাওড়ার মধ্যে এই ঘাসবাগান ডিপো-ই ছিল ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানির প্রধান পাওয়ার গ্রিড

তাহলে শুরু করা যাক আজকের ব্লগ হাওড়ায় ট্রাম......

ঘাসবাগান গোলাবাড়ি ডিপো - যা এখন ডাব্লু.বি.এস.টি.সি বাস টার্মিনাল

ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি -

কলকাতায় প্রথম ট্রাম চলেছিল ২৪-০২-১৮৭৩ তারিখে, তাও আবার ঘোড়ায় টানা ট্রাম। প্রথম কয়েক বছর এই ট্রাম চালিয়েছিল কলকাতা মিউনিসিপ্যালিটির কিছু ইংরেজ সাহেব কিন্তু এর ঠিক কিছু বছর পরে ২২-১২-১৮৮০ তারিখে এই ট্রাম পরিচালনার জন্য গঠন করা হল এক কোম্পানি, নাম দেওয়া হয় ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি। তবে কলকাতার এই গরমে সেই ঘোড়ায় চলা ট্রাম খুব বেশিদিন টিকতে পারেনি কারণ, এক ঘোড়াগুলি ছিল ঠান্ডা দেশের ঘোড়া ফলে কলকাতার এই বস্তাপচা গরম তাদের সহ্য হল না, আর দুই কলকাতার ওই মানুষ বোঝাই দুই কামরার ট্রাম টেনে নিয়ে যাওয়া ছিল অত্যন্ত কষ্টকর ফলে ১৮৮১ খ্রিষ্টাব্দ থেকেই এক এক করে সেসব ঘোড়া অসুস্থ হতে শুরু করল। ফলত এখন কোম্পানির কাছে একটাই উপায়, ঘোড়াবিহীন ট্রাম চালানো। এক্ষেত্রে ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে কোম্পানি বাষ্পীয় ইঞ্জিনে টানা ট্রাম চালালেও ১৮৯৬ খ্রিষ্টাবে কোম্পানি ইলেকট্রিক ট্রাম চালানোর জন্য কলকাতা কর্পোরেশনের কাছে দরখাস্ত করে। আর এরই ভিত্তিতে ২৭-০৩-১৯০২ তারিখে ধর্মতলা-খিদিরপুর লাইনেই সর্বপ্রথম ইলেকট্রিক ট্রাম চলে। তবে হিসাবের দিক থেকে বিচার করলে ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতায় ট্রাম চালু হলেও প্রথম ইলেকট্রিক ট্রাম চলে ১৯০২ খ্রিষ্টাবে, আর এর ঠিক তিন বছর পরে হাওড়ায় ট্রামের সূত্রপাত হয়

হাওড়ায় ট্রাম -

ইলেকট্রিক ট্রাম চালু হওয়ার পর থেকেই ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানির জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। আর ঠিক এই সময়েই কোম্পানি সিদ্ধান্ত নিল কলকাতার মতো হাওড়া-তেও এরকম ইলেকট্রিক ট্রাম চালু করা হবে। এবিষয়ে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে পরিকল্পনা শুরু হলে তা বাস্তবায়িত হতে সময় লাগে আরও তিন-বছর।

২৬ শে নভেম্বর ১৯০৭ খ্রিষ্টাব্দ, নোটিফিকেশন নং ৯ অনুযায়ী হাওড়া মিউনিসিপ্যালিটি (কর্পোরেশন) ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানিকে হাওড়ায় ট্রাম লাইন বসানোর লাইসেন্স দিল, তবে তিনটি শর্তে। এক, চুক্তি অনুযায়ী লাইসেন্স হাতে পাওয়ার দু-বছরের মধ্যে ট্রাম কোম্পানিকে ট্রাম পরিচালনার যাবতীয় কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে। দুই, ট্রাম চলাচলের সুবিদার্থে ৫৫০ ভোল্টের বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদনের জন্য একটি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ-উৎপাদন স্টেশন স্থাপন করতে হবে যেখান থেকে ভূগর্ভস্থ তারের সাহায্যে ওভারহেড গুলিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে, যার সাহায্যে ট্রামগুলি চলতে পারবে। তিন, হাওড়া মিউনিসিপ্যালিটি অথবা লোকাল গভর্নমেন্ট চাইলে পঁচিশ বছর পর মোট বার্ষিক আয়-ব্যায়ের হিসাব পর্যালোচনা করে ১-১-১৯৩১ তারিখের মধ্যে সমস্ত লাইন কিনে নেওয়ার অধিকার পাবে, আর যদি সেই সময় কিনে না নেওয়া হয় তাহলে সেই অধিকার বর্তাবে প্রত্যেক ৭ বছর অন্তর।

এই তিনটি শর্তের বিনিময়ে ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানি হাওড়ায় তাঁদের নতুন ট্রাম লাইন বসানোর কাজ শুরু করল। শর্ত অনুযায়ী প্রথমেই কোম্পানি ঘাসবাগানের কাছে ডবসন রোড ও গোলাবাড়ি রোডের সংযোগ স্থলে স্থাপন করল একটি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন স্টেশন (যা এখন ঘাসবাগান বা গোলাবাড়ির সি.টি.সি বাস ডিপো) ট্রাম কোম্পানির আগে দিয়েই পরিকল্পনা ছিল হাওড়ার দুদিকে লাইন পাতা হবে, এক হাওড়া-শিবপুর আর দুই হাওড়া-বাঁধাঘাট। পরিকল্পনা মতোই শুরু হল ট্রাম লাইন বসানোর কাজ। প্রথম ট্রামলাইন বসল ঘাসবাগানের দক্ষিণ দিকে, ৪ ফুট ৮.৫ ইঞ্চি মাপের একটি ট্রামলাইন হাওড়া স্টেশন থেকে শুরু করে জি.টি.রোড ধরে বাকল্যান্ড ব্রিজ (যা বর্তমানে বাঙালবাবু ব্রিজ হিসাবে পরিচিত) হয়ে হাওড়া কোর্ট ও ময়দানের ধার দিয়ে কেওড়াপাড়া ঘাট, শিবপুর পর্যন্ত প্রায় ২ মাইল গিয়ে শেষ হলআর উত্তর বিভাগে ওই একই মাপের (৪ ফুট ৮.৫ ইঞ্চি) দুটি লাইন চলে গেল সালকিয়ার বাঁধাঘাটে, তার মধ্যে একটি লাইন হাওড়া স্টেশন থেকে শুরু হয়ে ডবসন রোড ধরে পশ্চিমের গোলাবাড়ি রোড, জি.টি.রোড, হরগঞ্জ রোড হয়ে অরবিন্দ রোডের পূর্বদিক অর্থাৎ বাঁধাঘাট পর্যন্ত। আর ট্রামের অন্য লাইনটি বসানো হল হাওড়া স্টেশন থেকে ডবসন রোড ধরে পূর্বের গোলাবাড়ি রোড, হাওড়া রোড (যা জে.এন.মুখার্জী রোড বা সালকিয়া স্কুল রোড হিসেবে পরিচিত) হয়ে বাঁধাঘাট পর্যন্ত। তবে হাওড়ার উত্তর ও দক্ষিণে ট্রামলাইন পাতলেও প্রথম ট্রাম চলেছিল শূধুমাত্র হাওড়ার দক্ষিণ শাখায় অর্থাৎ হাওড়া-শিবপুর শাখায়

১০-৭-১৯০৮, প্রথম ট্রাম চালু হল হাওড়া-শিবপুর, রুট নং দেওয়া হল ৪০ এই ৪০ নং রুটের ট্রাম কভার করল প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তা। বর্তমানে যে জায়গাটি শিবপুর ট্রামডিপো নামে পরিচিত সেই স্থানেই শেষ হত এই ট্রাম লাইনটিআর এদিকে হাওড়া-বাঁধাঘাট (ভায়া জি.টি.রোড) শাখায় ট্রাম চালু হল ০৩-০৭-১৯০৮ তারিখেরুট নং দেওয়া হল ৪১, আর এই ৪১ নং রুটের ট্রামও কভার করল প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার রাস্তাঅন্যদিকে হাওড়া-বাঁধাঘাট (ভায়া হাওড়া রোড) শাখায় ট্রাম চালু হল ০২-১০-১৯০৮ তারিখে, রুট নং দেওয়া হল ৪২। আর এই রুটের ট্রাম কভার করল প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তা। 

কেমন ছিল সেই ট্রামযাত্রা?

হাওড়া-শিবপুর শাখায় ৪০ নং রুটের যে ট্রামগুলি চলত তার সবগুলিই ছিল এক কামরার ট্রাম, দ্বিতীয় শ্রেণী এবং ট্রামের সামনে-পিছনে মিলিয়ে থাকত একটি করে মোট দুটি ইঞ্জিনএর প্রধান কারণ শিবপুর ট্রামডিপোয়ে জায়গার অভাব। ট্রামডিপোয় ট্রাম ঘোরানোর জায়গা না থাকায় এই দুই মাইল বিশিষ্ট পথটির জন্য শুধুমাত্র দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট ট্রামই চলত। ট্রাম শিবপুরে পৌঁছালে গাড়ির ড্রাইভার সামনের ইঞ্জিন ছেড়ে চলে আসত কামরার পিছনের ইঞ্জিনে, ব্যাস তখন সেটিই হয়ে যেত ট্রামের প্রথম কেবিন, আর এভাবেই ট্রাম আবার হাওড়ায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যেত। তবে হাওড়া-বাঁধাঘাট শাখার ৪১ ও ৪২ নং রুটের ট্রামগুলি ছিল এক কামরার ও দুই কামরার এক্ষেত্রে কিন্তু জায়গার অভাব না থাকায় শিবপুরের মতো দুই ইঞ্জিনের ট্রাম ব্যবহার হত না। আর এই বাঁধাঘাট শিবপুর শাখার ট্রামগুলি থাকত ঘাসবাগান ট্রামডিপোয় (যা এখন ঘাসবাগান গোলাবাড়ির ডাব্লু.বি.এস.টি.সি বাস টার্মিনাল)

প্রথম দিকে এই ট্রাম কোম্পানি যাত্রীদের জন্য বেশ কিছু সুবিধা দিতযেমন ছুটির দিনে অথবা রবিবারে মাত্র ছয় আনায় সমস্ত দিন ট্রামে করে ঘোরার টিকিট বা ছুটির দিন ছাড়া সপ্তাহের প্রত্যেকদিন দুপুরের সময় সস্তায় কিছু মধ্যাহ্ন টিকিট। এসব নিয়েই দিব্যি চলত হাওড়ার ট্রাম।

এক্ষেত্রে বলে রাখি ১৯০৮ খ্রিষ্টাবে হাওড়ায় ইলেকট্রিক ট্রাম চালু হলেও সে ট্রাম কিন্তু কলকাতার ট্রামের সঙ্গে কোন যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারে নি এর প্রধান কারণ গঙ্গার ওপরে তখন ভাসমান পন্টুন ব্রিজ, যার উপরে ট্রাম লাইন বসানো অসম্ভব। তবে ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে যখন হাওড়া ব্রিজ তৈরির কাজ শেষ হতে চলল তখন দেখা গেল কলকাতা-হাওড়া ট্রাম চলাচলের জন্য হাওড়া ব্রিজে ট্রামলাইন বসতে শুরু করেছে কিন্তু আজকাল যেমনভাবে চতুর্দিকে সেতু উদ্বোধন হচ্ছে, এই হাওড়া সেতু কিন্তু মোটেই সেভাবে উদ্বোধন হইনি। তবে যদি বিচার করতেই হয় প্রথম হাওড়া ব্রিজে কোন গাড়ি চলেছিল? তাহলে জানা যাবে সে গাড়ি হল এই ট্রাম। হ্যাঁ! ১৮৪৩ খ্রিষ্টাব্দে হাওড়া ব্রিজ তৈরির পর রাতের অন্ধকারে প্রথম এক যাত্রীবিহীন ট্রাম এই সেতু উদ্বোধন করে। আর ০১-০২-১৯৪৩ তারিখ থেকে কলকাতার ট্রাম হাওড়ায় আসতে শুরু করে। প্রথম থেকেই শিবপুর থেকে হাওড়া স্টেশন ট্রাম চললেও হাওড়া ব্রিজ উদ্বোধনের পর অফিস টাইমের সময় শিবপুর থেকে ট্রাম যেত ডিরেক্ট ডালহৌসি, আর অন্যদিকে বাঁধাঘাট থেকে ট্রাম যেত শিবপুর অবধি।

সালকিয়ার ট্রাম আন্দোলন

প্রথমেই ফিরে আসি বর্তমান প্রসঙ্গে, দৈনন্দিন জীবনে আজও দেখছি কীভাবে কলকাতায় একের পর এক বিভিন্ন রুটের ট্রাম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হতে পারে যানজট, হতে পারে অলাভজনক পরিস্থিতি কিমবা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ। তবুও কলকাতার ঐতিহ্য যে ট্রাম তাঁর বন্ধের সূত্রপাত হয় সত্তরের দশক থেকেই। যার জেরে আজকের এই ট্রাম বিহীন হাওড়া।

বাঁধাঘাট শাখার ট্রাম বন্ধের খবর ২৫-১০-১৯৭০

১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ শে জুলাই, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানির পরিচালনভার তুলে নিলেন নিজেদের হাতে। আর এর ঠিক তিন বছর পর ১৯৭০ -এর ২৪ শে অক্টোবর, ট্রাম কোম্পানি ঘোষণা করল আগামী দিন অর্থাৎ ২৫-১০-১৯৭০ তারিখ থেকে হাওড়া-বাঁধাঘাট রুটের সমস্ত ট্রাম বন্ধ করে দেওয়া হবে, যে কোন কারণেই হোক এই রুটে আর ট্রাম চালানো হবে না সবাই জানত যেকোন সুবিদার্থেই হোক না কেন উত্তর হাওড়ায় এই ট্রাম না চলার ফলে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়বে বই কমবে না। ফলত খবরটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল চতুর্দিকে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে কোম্পানি যাতে ঘাসবাগান থেকে সমস্ত ট্রাম কলকাতায় নিয়ে যেতে না পারে সেই জন্য সেই রাতেই ট্রাম কর্মীরা হাওড়া ব্রিজের সামনে বিক্ষোভ করে। কিন্তু পরের দিন ২৫ শে অক্টোবর সালকিয়ার রাস্তায় দেখা মিলল ট্রামের। কিন্তু কী করে? ঘোষণা অনুযায়ী আজ থেকে খাতায় কলমে বাঁধাঘাট রুটের ট্রাম বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা, আইনত এই রুটে কোন ট্রাম নেই। তবে কি সরকার মেনে নিল? 

বন্ধের পরের দিন ট্রাম চালানোর খবর ২৬-১০-১৯৭০

না সরকার মানে নি। আসল কারণ জানা গেল ট্রাম কর্মীদের কাছ থেকে, সেদিনের যুগান্তর সংবাদপত্রে ছাপা হল আসল কারণ, কর্তার ইচ্ছার কর্ম এটা যে সকল ক্ষেত্রে সম্ভব নয় তা হাওড়ার ট্রাম কর্মীরা আজ প্রমাণ করলেনকোম্পানির সিদ্ধান্ত ছিল আজ থেকে এই রুটের সমস্ত ট্রাম তুলে নেওয়া হবে, কিন্তু ট্রামকর্মীরা জানিয়েছিলেন তোলা হবে না। তাই কর্তার আদেশ জারি হল ঠিকই, কিন্তু ট্রাম উঠলো না। তাই ২৫ শে অক্টোবর ট্রামকর্মীদের সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টায় কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করেই ট্রামকর্মীরা বাঁধাঘাট শাখায় ট্রাম চালালো আর ঠিক এইভাবে পরের দিনও অর্থাৎ ২৬ শে অক্টোবরও ট্রামকর্মীরা সালকিয়ায় ট্রাম চালাল। কিন্তু বাধ সাধল পরের দিন, ২৭ শে অক্টোবর ঘাসবাগান ট্রামডিপোর ফোরম্যানকে রাজাবাজার ট্রামডিপোয় বদলি করে দেওয়া হল এবং ঘাসবাগান ট্রামডিপোর টুলরুমও বন্ধ করে দেওয়া হল। টুলরুম, যেটি খুলে সাধারণত ট্রামের ইঞ্জিনে তেল দিলে তবেই ইঞ্জিন চলাচলের উপযোগী হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে টুলরুম বন্ধ করে দেওয়ায় ফোরম্যান বিহীন ডিপো থেকে কর্মীরা ট্রাম বের করতে পারল নাফলে ২৭ শে অক্টোবর বাঁধাঘাট-হাওড়া রূটের ট্রাম বন্ধ থাকল। ট্রামের এই বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবর কিন্তু ছড়াতে বেশি সময় লাগল না। হাওড়ার এই ট্রাম বন্ধ হওয়ার প্রতিবাদে সামিল হল কলকাতা ট্রাম ইউনিয়ন, তারা ঘোষণা করল এই বন্ধের প্রতিবাদে এই দুই দিন অর্থাৎ ২৭ ও ২৮ শে অক্টোবর কলকাতার রাস্তাতেও তারা ট্রাম চালাবে না। ব্যাস হিসাবমত এই দুইদিনও কলকাতা বিনা ট্রামে চলতে থাকল।

বন্ধের দু-দিন প্রেও ট্রাম চালানোর প্রতিবেদন ২৭-১০-১৯৭০

কিন্তু আমরা জানি সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন কতটা ভিত্তিহীন হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রেও সেটিই হল। দু-দিন কলকাতার রাস্তায় ট্রাম না চলার ফলে প্রশাসন এক বৈঠকে জানাল আগামী ২৯ শে অক্টোবর থেকে কলকাতার সমস্ত ট্রাম চালানো বাধ্যতামূলক, আর বাঁধাঘাট শাখার ট্রাম আপাতত এখন বন্ধ থাকবে, তবে হাওড়া স্টেশন চত্বরের কাজ কিছুটা সম্পন্ন হলে এই শাখায় ট্রাম পুনরায় চালানো হবে কি না তা পুনঃবিবেচনা করা হবে।

পরিশেষে ২৭ শে অক্টোবর বাঁধাঘাট রুটের ট্রাম বন্ধ হয়ে যাওয়ার প্রতিবাদে দুদিন ব্যাপী কলকাতার ট্রাম বন্ধ থাকার খবর ২৮-১০-১৯৭০

কিন্তু তা যে আর কোনোদিন সম্ভব হয়নি তা বর্তমান সময়ই সাক্ষী। রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এই ট্রাম আন্দোলন আর পাঁচটা আন্দোলনের মতোই মুছে ফেলা হল। ফলত ২৫-১০-১৯৭০ তারিখে হাতে কলমে বাঁধাঘাট শাখার ট্রাম উঠে গেলেও বাস্তবে এই শাখার ট্রাম বন্ধ হল ২৭-১০-১৯৭০ তারিখে। আর এর ঠিক এক বছর পর ৫-১২-১৯৭১ তারিখে শিবপুর শাখার ট্রামও বন্ধ হয়ে যায়। তবে ১৯৯২ পর্যন্ত কলকাতার অনেক ট্রামই আসত হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত, কিন্তু এই ট্রাম চলাচল এর ফলে হাওড়া ব্রিজের ক্ষতি হতে পারে বলে সে ট্রামও বন্ধ হয়ে গেল। আর এভাবেই হাওড়ার ইতিহাসে ট্রাম পর্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।

কল্দকাতার ট্রাম দু-দিন বন্ধের পর ও পুনরায় বাঁধাঘাট শাখার ট্রাম চালু হতে পারে এই প্রতিবেদনে ২৯-১০-১৯৭০ এর খবর

**এই ব্লগের প্রথম কয়েকটি ছবি নেওয়া হয়েছে ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ কোম্পানির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেজ থেকে ও টিকিটের ছবিগুলি সাংবাদিক সৌভিক মুখার্জী -র থেকে এবং বিভিন্ন তারিখের যুগান্তর সংবাদ পত্রের প্রতিবেদনের অংশগুলি নেওয়া হয়েছে ব্রিটিশ লাইব্রেরি থেকে।

******************************************************

লেখা, গবেষণা ও ছবি - প্রীতম নস্কর  

ই-মেল - pritamnaskar.pn@gmail.com

ব্লগটি ভালো লেগে থাকলে ব্লগের লিঙ্ক শেয়ার করতে পারেন, তবে পূর্বানুমতি ছাড়া আমার তোলা আলোকচিত্রগুলি এবং ব্লগের রচনাগুলি অন্য কোথাও কপি-পেস্ট বা বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবহার করা চলবে না।

******************************************************

তথ্যসূত্রঃ-

  • কলিকাতা দর্পণ রাধারমণ মিত্র
  • পাঁচশ বছরের হাওড়া হেমেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়
  • হাওড়া জেলার ইতিহাস (দ্বিতীয় খণ্ড) অচল ভট্টাচার্য
  • হাওড়া তারাপদ সাঁতরা
  • Bengal District Gazetteers – Howrah
  • British Library

Comments

  1. আমি ছাত্র কনশেশনে তিন পয়সায় হাওড়া-বাঁধাঘাট রুটে যাতায়াত করেছি পঞ্চাশের দশকের শেষ ও ষাটের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত।

    ReplyDelete

Post a Comment