কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত সবকটি চিনা চার্চের মধ্যে সবথেকে পুরনো এই নাম সুন চার্চ গড়ে উঠেছে ১৭ নম্বর ড্যামযেন লেন, কলকাতা – ৭০০০৭৩। প্রথমেই বলে রাখা ভালো চার্চটি ঠিক এমন যায়গায় অবস্থিত সাধারণত নতুনদের খুঁজে পেতে অসুবিধেই হবে। ব্ল্যাকবার্ন লেন থেকে ড্যামযেন লেন ধরে সোজা হাঁটলে একসময় রাস্তাটি ডানদিকে ঘুরবে, ঠিক এই মোড়েই বামদিকে দেখতে পাওয়া যাবে নান সুন চার্চের দরজা। চিনা অক্ষরে সুসজ্জিত লাল রঙের কাঠের দরজা ঠেলে প্রবেশ করলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে প্রায় দুশো বছরের পুরনো এই নাম সুন চার্চে।
চার্চের প্রবেশদ্বার |
চার্চের উন্মুক্ত উঠোন |
কলকাতায় বসবাস শুরু করার পর প্রথম থেকেই চিনাদের প্রত্যেকটি গোষ্ঠী তাদের নিজেদের জন্য ক্লাব (হুইগুয়ান) ও চার্চ (প্যাগোডা) তৈরি করে। কলকাতায় এই টিরেটা বাজারের চত্বরেই গড়ে তোলে এরকম ছয়টি (৬ টি) চার্চ। তারমধ্যে সবথেকে পুরনো এই নাম সুন চার্চ গড়ে উঠেছিল ১৮২০ খ্রিষ্টাব্দে।
কলকাতার সবকটি চিনা চার্চের মধ্যে একমাত্র এই চার্চেই রয়েছে উন্মুক্ত উঠোন। চার্চের মূল দেবতা হলেন কুয়ান তি বা গুয়ান ইউ এবং সঙ্গে রয়েছে আরও দুই দেবতা লু বান ও কাইশেন। চিনা মাইথোলজি অনুযায়ী কুয়ান তি বা গুয়ান ইউ হল যুদ্ধের দেবতা, অন্যদিকে লু বান হল কাঠের যন্ত্রের দেবতা (ইঞ্জিনিয়ার), আর ধনসম্পদের দেবতা হল কাইশেন। সাধারণত চিনের বিভিন্ন প্রদেশে দেবতাদের বিভিন্ন রূপে পূজিত হয়। এই চার্চে দেবতাদের দেখলে ঠিক এমনটাই লক্ষ্য করা যায়।
উপাসনা গৃহের মূল প্রবেশদ্বার |
সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি চিনা অলংকরণ |
অন্যান্য চার্চের তুলনায় এই চার্চের গঠনও অনেকটাই আলাদা। উপাসনা গৃহে প্রবেশের পরই দেখতে পাওয়া যায় সিলিং থেকে ঝুলছে বিভিন্ন চিনা সামগ্রী। গৃহের মধ্যিখানে সিলিং থেকে ঝুলছে সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি এক অপূর্ব অলংকার, যেখানে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে চিনের রাজতন্ত্র। এছাড়াও বামদিকে সিলিং থেকে ঝুলছে একটি বিশাল চিনা বাদ্যযন্ত্র যার নাম তাংগু ও ডানদিকে একটি বিশাল চিনা ঘন্টা। সাধারণত এই চিনা ঘন্টা সমগ্র বৌদ্ধমন্দিরেই দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে ঘন্টাটির বিশেষত হল তার চারিত্রিক গঠন। ঘন্টাটির বাইরে রয়েছে সুন্দর কারুকার্য ও সঙ্গে চিনা হরপে লেখা বিভিন্ন তথ্য। এছাড়াও চার্চটির দুপাশে রয়েছে বিভিন্ন চিনা অস্ত্র সামগ্রী।
চিনা দেবতা কুয়ান তি |
চিনা দেবতা কাইশেন |
চিনা দেবতা লু বান |
সম্পূর্ণ পিতলের তৈরি চিনা ধুপদানি যারমধ্যে খোদাই করা চিনা তথ্য |
চিনা ঘণ্টা |
চিনা অস্ত্র সামগ্রী |
নাম সুন চার্চের উঠোন প্রাঙ্গনেই রয়েছে চার্চ প্রতিষ্ঠার প্রস্তরফলক যদিও ফলকটি আগাগোড়া চিনা হরপে। এই চার্চেরই লাগোয়া ঘরে গড়ে উঠেছে চিনা বিদ্যালয় যা নাম সুন চার্চ স্কুল নামে পরিচিত। ১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে তৈরি এই স্কুলে শুধুমাত্র চিনা শিক্ষায় পড়ানো হলেও বিগত ২০ বছর যাবত বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র ইংরেজি শিক্ষায় পড়ানো হয়।
চার্চ প্রতিষ্ঠার প্রস্তরফলক |
বিশেষ দ্রষ্টব্র্যঃ-
নাম সুন চার্চ সপ্তাহের সমস্থ দিনই খোলা থাকে। যে কোন ধর্মের মানুষ যে কোন দিনই আসতে পারে, তবে সপ্তাহের রবিবার সাধারণত এই চার্চ চিনাদের আড্ডার জায়গা হয়ে ওঠে ; তাই রবিবার গেলে এদের দেখতে পাওয়া যাবে। প্রবেশ সম্পূর্ণ বিনামূল্য। ফটো তোলার ব্যাপারে কোন বাধানিষেধ নেই, তবে মনে রাখবেন এটি একটি সক্রিয় ধর্মীয় স্থান তাই ফটো তোলার আগে অনুমতি নেওয়াই ভাল।
কীভাবে যাবেনঃ-
হাওড়া থেকে যে
কোন বাস / ট্যাক্সি ধরে নামতে হবে টি-বোর্ড সেখান থেকে মিনিট দশেক পায়ে হেঁটে
পৌঁছাতে হবে টিরেটা বাজার অথবা কলকাতা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ। অথবা কলকাতার সেন্ট্রাল মেট্রো
স্টেশনের গেট নং ৪ –এ উঠে পৌঁছাতে হবে
কলকাতা টেলিফোন এক্সচেঞ্জ / যোগাযোগ ভবন। সেখান থেকে ড্যামজেন লেন ধরে সোজা
হাঁটলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে নাম সুন চার্চে।
******************************************************
লেখা, গবেষণা ও ছবি - প্রীতম নস্কর
ই-মেল - pritamnaskar.pn@gmail.com
ব্লগটি ভালো লেগে থাকলে ব্লগের লিঙ্ক শেয়ার করতে পারেন, তবে পূর্বানুমতি ছাড়া আমার তোলা
আলোকচিত্রগুলি এবং ব্লগের রচনাগুলি অন্য কোথাও কপি-পেস্ট বা বাণিজ্যিক ভাবে
ব্যবহার করা চলবে না।
******************************************************
আরও কিছু কলকাতার চিনা চার্চ -
- কলকাতার চিনাপাড়া
- তুং অন চার্চ ও নানকিং রেস্টুরেন্ট
- সি ইপ চার্চ
- সি ভই ইউন লিওং ফুথ চার্চ
- আছিপুর চিনা মন্দির ও টং আছু
গুগল ম্যাপ / কোঅরডিনেটঃ-
তথ্যসূত্রঃ-
- Chini in the Mishti Doi by Soumitra Das – THE HINDU BUSINESS LINE
- The Cha Project Report - 2014
- Urban Ethnic Space: A Discourse on Chinese Community in Kolkata, West Bengal
- Home, city and diaspora: Anglo–Indian and Chinese attachments to Calcutta ALISON BLUNT AND JAYANI BONNERJEE
- The Chinese of Calcutta - Jawhar Sircar
Comments
Post a Comment