![]() |
সি ইপ চার্চ |
সি ইপ চার্চ। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে তৈরি হওয়া দ্বিতল বিশিষ্ট এই সি ইপ চার্চের ঠিকানা - ২২/১ ছাতাওয়ালা গলি, কলকাতা - ৭০০০৭৩। টিরেটা বাজার চত্বরে চিনাদের গড়ে ওঠা চার্চগুলির মধ্যে "সি ইপ চার্চ" উৎসর্গ করা হয়েছে "কুয়ান ইন" বা "গুয়ান ইন" দেবীকে। চিনের গুয়াংডং (ক্যান্টন) প্রদেশের চারটি বিভাগ সিনহুই, তাইশান, কাইপিং এবং এনপিং জেলা থেকে আসা চিনারা তৈরি করেন এই চার্চ। ক্যান্টনিজ সংখ্যা পদ্ধতিতে ‘সি’ বলা হয় ৪ সংখ্যাকে। ‘সি ইপ’ যা ক্যান্টনিজে ‘সেইআপ’ বা ‘সেজে ইউপ’ নামে পরিচিত, যার অর্থ চার বিভাগ (কাউন্টি)। ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে দেশান্তর হওয়ার পর চিনারা বসবাস শুরু করে কলকাতার এই টিরেটা বাজার চত্বরে। বসতি স্থাপনের সঙ্গে বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসা চিনাগোষ্ঠীরা গড়ে তোলেন ৬ টি ক্লাব (হুইগুয়ান) ও চার্চ (পাগোডা / মন্দির)। আর এদের মধ্যে অন্যতম সক্রিয় চার্চ হল ‘সি ইপ চার্চ’।
![]() |
সি ইপ চার্চের উপাসনা গৃহ |
![]() |
সিয়ি হুইগুয়ান (সি ইপ চার্চের নিচের তলা) |
চিনা অভিবাসন / মাইগ্রেসান –
সময়ের দিক থেকে বিচার করলে বাংলার সঙ্গে চিনের প্রথম যোগসূত্র গড়ে ওঠে যখন চিনা পরিব্রাজক ফা হিয়েং ও হিউয়েন সাং বাংলার তমলুক বন্দরে পদার্পণ করে। তবে সেক্ষেত্রে এই ইতিহাস আরও পুরনো। পরবর্তীকালে ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে চিনের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে চিনারা বেড়িয়ে
পরে বিদেশের মাটিতে বসবাস স্থাপনের আসায়। ব্যবসায়িক সূত্র ছাড়াও চিন-জাপানের যুদ্ধ, কখনো গৃহযুদ্ধ তো কখনো দেশীয় অর্থনৈতিক মন্দা, আবার কখনো কর্মসংস্থানের আশায় ভিটেমাটি ছেড়ে তারা যাত্রা শুরু করে
দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড,
ইন্দোনেশিয়া এমনকি ভারতের মাটিতেও তারা চলে আসে নতুন কর্মসংস্থানের
আশায়। ব্রিটিশ সরকারের সময় হাতেকলমে ভারতে প্রথম চিনা নাগরিক হিসাবে নাম উঠে আসে ইয়াং
দাইজাং বা টং আছু, যিনি কলকাতার আছিপুরে সুগার
মিল প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও চিনের গুয়াংডং প্রদেশ, হুবেই, শাংডং, দোংগাং, সিহুই প্রভৃতি
প্রদেশ থেকে চিনারা এসে বসবাস করতে থাকে কলকাতায়। আছিপুর ছাড়াও প্রথমদিকে এইসব
চিনারা আশ্রয় নেয় ধর্মতলার কসাইতলা অঞ্চলে, এবং এখান থেকেই
তারা কলকাতার আরও উত্তরদিকে বসবাস স্থাপন করে। বর্তমানে লোকমুখে পরিচিত টেরিটি
বাজার আসলে নাম টিরেটা বাজার। এই টিরেটা বাজার চত্বরই হল কলকাতার পুরনো
চিনাপাড়া বা ওল্ড চায়নাটাউন। এই টিরেটা বাজারের পরিকল্পনা করেন এক ইতালিয়ান
আর্কিটেকচার এদুয়ারদো টিরেটা, যার নাম থেকেই এই
বাজারের নামকরণ। কর্মসংস্থানের লক্ষে বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আসা চিনারা যুক্ত হয়ে
যায় তাদের নিজস্ব পেশায়। দক্ষ শ্রমিকেরা ছুতোর মিস্ত্রি, জুতো তৈরি,
দাঁতের ডাক্তার, চিনা রেস্টুরেন্ট এবং অদক্ষ
শ্রমিকেরা শ্রমের বিনিময়ে যুক্ত করে নেয় বিভিন্ন কাজে। এদিকে বিভিন্ন প্রদেশ থেকে
আসা চিনাগোষ্ঠীরা নিজেদের প্রয়োজনে গড়ে তোলেন ক্লাব (হুইগুয়ান) ও চার্চ (পাগোডা /
মন্দির)। চিনাদের উপাসনা গৃহকে মন্দির বা প্যাগোডা হিসাবে সম্বোধন
করা হলেও ব্রিটিশ শাসিত অঞ্চলগুলিতে সেগুলি চার্চ হিসাবেই পরিচিত পায়,
তাই কলকাতায় তৈরি করা চিনা মন্দিরগুলি প্রকাশ পায় চার্চ হিসাবে।
সাধারণত চিনাদের হুইগুয়ানগুলি ছিল একটি আড্ডার জায়গা, যেখানে
চিনা অভিবাসীরা একত্রিত হত। দিনের শেষে কিমবা দিনের শুরুতে মিলিত হত তারা। আড্ডা,
খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাম্প্রদায়িক সমাবেশ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে তারা
ব্যবহার করত এই হুইগুয়ানগুলিকে। এই হুইগুয়ানগুলি ছিল একমাত্র মাধ্যম যেখানে তারা
একত্রিত হয়ে মানুষের সেবায় নিযুক্ত হত। সেই সময় চিনের বিপ্লবকে সমর্থনের জন্য এই
হুইগুয়ানগুলি থেকেই টাকাপয়সা পাঠাতেন চিনের সান ইয়েত-সেন (চীন প্রজাতন্ত্রের
প্রথম রাষ্ট্রপতি) -কে। কলকাতার টিরেটা বাজার
চত্বরেই গড়ে উঠেছিল এইরকম ৬ টি হুইগুয়ান (হুই-কুয়ান) – ‘ইক্সিং হুইগুয়ান’ (ইয়ে হিং), ‘নাঙ্কসুন হুইগুয়ান’ (নাম শুন), ‘সিয়ি হুইগুয়ান’ (সি ইপ), ‘ডং’আন হুইগুয়ান’ (তুং অন), ‘হুইনিং হুইগুয়ান’ (ওয়েই নিং), ‘ঝোংইতাং / জিয়াইং হুইগুয়ান’। সমাবেশ স্থান হিসাবে পরিচালনা হওয়া ছাড়াও
হুইগুয়ানগুলির দায়িত্বে ছিল নিজেদের কবরস্থান (ট্যাংরা অঞ্চলে) ও একটি করে মন্দির।
যেহেতু এই হুইগুয়ানগুলিই ছিল তাদের একমাত্র মিলনস্থল, তাই এখানেই তারা তৈরি করেছিল নিজেদের মন্দির। সাধারণত
হুইগুয়ানগুলির নিচের তলা কিমবা পাশের ঘরে গড়ে উঠত এই মন্দির। আর এইসব
হুইগুয়ানগুলির পরিচালনায় টিরেটা বাজার চত্বরে গড়ে উঠেছিল ৬ টি চার্চ / মন্দির। ‘সি ইপ চার্চ’, ‘তুং অন চার্চ’, ‘নাম সুন চার্চ’, ‘গি হিং চার্চ’, ‘সি ভই ইউন লিওং ফুথ চার্চ’ এবং ‘চুংঘি ডং থিয়েন হাওই চার্চ’। কলকাতার বুকে এখনও চিনাদের এই ছয়টি মন্দির দেখতে
পাওয়া যায় এবং প্রত্যেকটি এখনও সক্রিয়।
![]() |
সিয়ি হুইগুয়ান (চিত্র - ২) |
![]() |
সিয়ি হুইগুয়ান ও চিনা অক্ষরে লেখ স্মারক |
সি ইপ চার্চের ইতিহাস –
চিনা অভিবাসের সময় গুয়াংডং প্রদেশের (পূর্ব নাম ক্যান্টং) –এর চারটি (৪) জেলা সিনহুই (সানউই), তাইশান (তোইশান), কাইপিং (হোইপিং) ও এনপিং (ইয়ানপিং) থেকে আসা চিনা পরিযায়ীরা গড়ে তুলেছিলেন ‘সিয়ি হুইগুয়ান’ (সি ইপ), স্থাপনকাল ১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দ। আগেই বলেছি সিয়ি (সি ইপ) এর অর্থ চার (৪)। অন্যান্য হুইগুয়ান-দের মতো সিয়ি হুইগুয়ানের অধীনেও রয়েছে একটি চার্চ ও কবরস্থান। কলকাতায় টিরেটা বাজার অঞ্চলে ‘সি ইপ চার্চ’ ও ট্যাংরায় গড়ে উঠেছে ‘সিয়ি কবরস্থান’(সি ইপ কবরস্থান)। ১৮৪৫ খ্রিষ্টাব্দে সিয়ি হুইগুয়ান ও সম্ভবত ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠা হয় সি ইপ চার্চ। কারণ বর্তমানে সি ইপ চার্চ যে জায়গায় রয়েছে সেটি ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে পুনর্নির্মাণ হয়। তবে একদম প্রথমে চার্চটি কোথায় ছিল তার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে কয়েকটি তথ্যের ভিত্তিতে অনুমান করা হয় কলকাতার এজরা স্ট্রীটে প্রথম তৈরি হয়েছিল সি ইপ চার্চ। কিন্তু এ সম্বন্ধেও কোনো প্রামাণ্য নথি নেই, কারণ ১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে ভারত-চিনের যুদ্ধ চলাকালীন এই চার্চ ও হুইগুয়ানের অধীনে থাকা অনেক নথি নষ্ট হয়ে যায়। ফলত পরবর্তীকালে ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে এই চার্চ কীভাবে টিরেটা বাজারের ছাতাওয়ালা গলিতে পুনর্নির্মাণ করা হল সে সম্বন্ধেও কোনো নথি পাওয়া যায় নি।
বর্তমানে পোদ্দার কোর্ট হিসাবে পরিচিত ক্যালকাটা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট ও বি.এস.এন.এল অফিসের মধ্যবর্তী অংশে দেখতে পাওয়া যায় ‘সি ইপ চার্চ’। অন্যান্য চার্চের তুলনায় চিনা উৎসবের ক্ষেত্রে এই চার্চের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে চার্চকে কেন্দ্র করে বছরে দুটি উৎসব পালিত হয়, একটি এপ্রিল মাসে ও অন্যটি জুন মাসে।
![]() |
পৌরাণিক চিনা অস্ত্র |
সি ইপ চার্চের গঠনশৈল -
চার্চটি মূলত দুটি অংশে বিভক্ত – একটি ক্লাব (হুইগুয়ান) ও অন্যটি চার্চ (মন্দির)। চার্চের মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশের পর দেখতে পাওয়া যায় এক বিশাল হলঘর, যার মধ্যিখানে রয়েছে একটি টেবিল ও টেবিলকে কেন্দ্র করে সারি সারি চেয়ার। আসলে চার্চের এই নিচের অংশটি হল ‘সিয়ি হুইগুয়ান’ অর্থাৎ ক্লাব। এটিকে চিনারা এখন অনেকটা কমিউনিটি হল হিসাবে ব্যবহার করে। চার্চটি তৈরি হওয়া থেকেই এটি ছিল তাদের আড্ডার জায়গা। কারণ একটাই, যেভাবেই হোক চার্চটিকে কোনক্রমে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাই এখনও সপ্তাহের প্রায় প্রত্যেকদিন (বিশেষ করে রবিবার) কলকাতার চিনারা মিলিত হয় এই ক্লাবে, ক্যারাম অথবা তাস, আবার কখনও দাবায় মাতিয়ে রাখে নিজেদের। কিন্তু তাদের প্রধান খেলা ছিল জুয়া (গ্যাম্বলিং), যা থেকে পাওয়া বেশিরভাগ অর্থই খরচ হত চার্চের রক্ষণাবেক্ষণে। তবে এখন সে খেলা আর দেখতে পাওয়া যায় না, কিন্তু পাশেই চুংঘি ডং...চার্চে কিন্তু সে খেলার দেখা মেলে (চিনাদের নিজস্ব খেলা মাহজং)। সি ইপ চার্চ পরিদর্শনের সময় ক্লাবের মধ্যে যে জিনিসটি নজর কারবে তা হল চিনা খবরের কাগজ। ঠিক সময়ে গেলে চার্চের কিছু সদস্যদের এখনও এই চিনা খবরের কাগজ পড়তে দেখা যায়, যা আবার ছাপা হয় খোদ কলকাতায় (বর্তমানে সাপ্তাহিক হিসাবে খবরের কাগজ ছাপা হয় কলকাতার টাংরায়)। এছাড়াও হলের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে চিনাদের স্থাপত্য, যেমন – চিনাদের হাতে তৈরি কিছু দুর্লভ কাঠের চেয়ার, কিমবা সিলিং থেকে ঝুলন্ত সম্পূর্ণ কাঠে তৈরি চিনা অক্ষরে লেখা স্মারক, হলের বিভিন্ন স্তম্ভে থাকা চিনা ক্যালিগ্রাফি।
![]() |
“কুয়ান ইন” বা “গুয়ানইন” |
![]() |
“কাইশেন” বা “চই শান” |
“কুয়ান ইন” / “গুয়ানইন”
চার্চের উপরের তলাটিই চিনাদের মূল উপাসনা গৃহ। হলের প্রবেশদ্বারের পাশেই রয়েছে কাঠের সিঁড়ি যার মাধ্যমে পৌঁছে যাওয়া যায় চার্চের উপাসনাগৃহে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময়ও দেখা যায় চিনা অক্ষরে লেখা স্মারক। চার্চের উপরের তলাটিতে রয়েছে প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো কাঠের সিলিং, যার নিচে বিরাজ করছে চিনা দেবী “কুয়ান ইন” বা “গুয়ানইন”। চার্চটি মূলত উৎসর্গ করা হয়েছে চিনা দেবী গুয়ানইন / গুয়ানিন -কে। এদিকে ‘গুয়ানইন’ শব্দের অর্থ ‘যে মানব জগতের কান্না দেখেন ও শোনেন’ এবং চিনা পুরাণ অনুযায়ী তিনি করুণার বা দয়ার দেবী হিসাবে পরিচিত। তবে পুরাণ মতে দ্বাদশ শতাব্দীর পূর্বে তিনি ছিলেন পুরুষ দেবতা। ভারতীয় বৌদ্ধদের কাছে গুয়ানইন পরিচিত “অবলোকিতেশ্বর”হিসাবে। অবলোকিতেশ্বর অর্থাৎ ‘যিনি সহানুভূতির চোখে দেখেন’। যিনি পরবর্তীকালে বৌদ্ধধর্মে বোধিসত্ত্ব রূপে পূজিত হন। এই বোধিসত্ত্ব ভারত ও তিব্বতে পুরুষ হিসাবে চিত্রিত হয়েছে। তিব্বতি ঐতিহ্যে প্রতিটি দালাই লামা-কেই অবলোকিতেশ্বরের পুনর্জন্ম হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হয়। এদিকে চিনে বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বর পরিচিতি লাভ করে গুয়ানইন হিসাবে। আর এভাবেই বোধিসত্ত্ব অনুযায়ী তিনি কোথাও পুরুষ রূপে তো কোথাও নারী রূপে পূজিত হয়ে আসছেন।
![]() |
‘গুয়ান ইউ’ (‘কুয়ান তি’ / ‘গুয়ানদি’ / ‘গুয়ানগং’) |
![]() |
‘কাইশেন’ ও ‘গুয়ান ইউ’
এছাড়াও সি ইপ চার্চের উপাসনা গৃহে রয়েছে আরও কিছু দেবতা। যেমন – গুয়ান ইনের পাশেই রয়েছে দেবতা “কাইশেন” বা “চই শান”। চিনা পুরাণ অনুযায়ী কাইশেন হল ধনসম্পদের দেবতা, যিনি চিনা লৌকিক ধর্ম ও তাওশিন ধর্মেও পূজিত হন। তাই কাইশেনের মূর্তি বেশিরভাগ চিনা ব্যবসায়ীদের ঘরে দেখে দেখতে পাওয়া যায়।
এই উপাসনা গৃহের ঠিক বামদিকে রয়েছে আরও একটি ছোট
উপাসনা গৃহ। চিনাদের অন্যান্য মন্দিরগুলোর মতো এই উপসনা গৃহেও রয়েছে দেবতা ‘গুয়ান ইউ’ –এর মূর্তি। চিনা দেবতা ‘গুয়ান ইউ’ (‘কুয়ান তি’ / ‘গুয়ানদি’ / ‘গুয়ানগং’) হলেন যুদ্ধের দেবতা। চিনাদের
অন্যান্য দেবতাদের মতো পূর্বে গুয়ান ইউ ছিলেন রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। চিনে হান
সাম্রাজ্যের শাসনকালে গুয়ান ইউ ছিলেন হান রাজবংশের জেনারেল। চিনা ঐতিহাসিক উপন্যাস
‘রোমান্স অফ দ্যা থ্রি কিংডম’ অনুযায়ী সেনাপতি লিউ বেই –এর অধীনে ছিলেন গুয়ান ইউ। ‘ব্যাটেল অফ রেড ক্লিফ’, ‘ব্যাটেল অফ বোমা’, ‘ব্যাটেল অফ জিয়াংলিং’ –এও তাঁর অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তবে
জিয়াংলিং-এ যুদ্ধের সময় গুয়ান ইউ এবং তাঁর পুত্র গুয়াং পিং মারা যান, এবং তারপর থেকেই গুয়ান ইউ দেবতা হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। পুরাণ অনুযায়ী গুয়ান ইউ চিত্রিত হয়েছে
লাল বর্ণে। সাধারণত লাল মুখ ও সবুজ রঙের পোশাকে তাঁকে সর্বত্র দেখা যায়, এবং গুয়ান
ইউ-এর সঙ্গে থাকে তাঁর প্রধান অস্ত্র গুয়ানডাও, যার নাম ‘গ্রিন ড্রাগন ক্রিসেন্ট ব্লেড’। তবে এই ‘গুয়ান ইউ’ দেবতাকে উৎসর্গ করে টিরেটা বাজারে
চিনাদের আরও একটি মূল চার্চ রয়েছে, ‘তুং অন চার্চ’ – যার নিচের তলায় একসময় গড়ে উঠেছিল বিখ্যাত ‘নানকিং রেস্টুরেন্ট’। এই তুং অং চার্চ বা নানকিংরেস্টুরেন্টের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হলে এখানে ক্লিক করুন।
![]() |
কাঠ খোদাই করা চিনা শিল্পকলা |
![]() |
কাঠ খোদাই করা চিনা শিল্পকলা (চিত্র - ২) |
সি ইপ চার্চের উপাসনা গৃহে বিভিন্ন
দেবদেবীর বিগ্রহ ছাড়াও রয়েছে চিনাদের বিভিন্ন পৌরাণিক সামগ্রী, যেমন উপাসনাগৃহের দু’পাশে থাকা চিনাদের পৌরাণিক অস্ত্র।
তবে চার্চের সিলিং থেকে ঝুলতে থাকা এক অপূর্ব অলংকার এসবের থেকেও বেশি দৃষ্টি
আকর্ষণ করবে। এই অলংকারটি দেখতে অনেকটা নৌকার মতো, তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ কাঠ খোদাই
করে। চিনের সামাজিক, রাজনৈতিক চিত্র ফুটে উঠেছে এর মধ্যে। কলকাতার বাকি চার্চগুলির মধ্যে এই সি ইপ চার্চে ও একমাত্র নামসুন চার্চেই সুদূর চিন থেকে নিয়ে আসা এই অলংকরণ দেখতে পাওয়া যায়।
ধূপধূনার সুবাস আর লাল-হলুদ বর্ণের সংমিশ্রণে উপাসনাগৃহের সম্পূর্ণটাই তৈরি হয়েছে এক আধ্যাত্মিক পরিবেশের, যেখানে প্রবেশের পর কলকাতার মানুষ হারিয়ে যাবে সুদূর চিনের কোন মন্দিরে, যেখানে এখনও চিনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব থেকে মুক্ত একটি প্রাচীন মন্দির তাদের আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের ঐতিহ্য রক্ষা করে চলেছে।
******************************************************
লেখা, গবেষণা ও ছবি - প্রীতম নস্কর
ই-মেল - pritamnaskar.pn@gmail.com
ব্লগটি ভালো লেগে থাকলে ব্লগের লিঙ্ক শেয়ার করতে পারেন, তবে পূর্বানুমতি ছাড়া আমার তোলা
আলোকচিত্রগুলি এবং ব্লগের রচনাগুলি অন্য কোথাও কপি-পেস্ট বা বাণিজ্যিক ভাবে
ব্যবহার করা চলবে না।
******************************************************
আরও কিছু কলকাতার চিনা চার্চ -
- কলকাতার চিনাপাড়া
- নাম সুন চার্চ
- তুং অন চার্চ
- সি ভই ইউন লিওং ফুথ চার্চ
- আছিপুর চিনা মন্দির - "বোগোং বোপো" ও টং আছু
![]() |
![]() |
![]() |
![]() |
কীভাবে যাবেনঃ-
হাওড়া থেকে যে কোন বাস / ট্যাক্সি ধরে নামতে হবে টি-বোর্ড সেখান থেকে মিনিট দশেক হাঁটা পথে পৌছে যাবেন টিরেটা বাজার অথবা কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট। আর মেট্রোয় যেতে চাইলে কলকাতার সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশনের গেট নং ৪ –এ উঠে পৌঁছাতে হবে কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট এবং এই ভবনের ঠিক পাশেই দেখতে পাবেন সি ইপ চার্চ।
গুগল ম্যাপ / কোঅরডিনেটঃ-
তথ্যসূত্রঃ-
The Cha Project Report – 2014
- The Bowbazar Chinatown – by Zhang Xing
- The Chinese in South Asia – by Zhang Xing and Tansen Sen
- Devotion to Guanyin - Pluralism Project at Harvard University
- Guan Yu: The Religious Afterlife of a Failed Hero - Barend J. ter Haar
- The Chinese in Calcutta:A Study on Settlement and Demographical Patterns - Arpita Bose
- Home, city and diaspora: Anglo–Indian and Chinese attachments to Calcutta ALISON BLUNT AND JAYANI BONNERJEE
- The Chinese of Calcutta - Jawhar Sircar
Comments
Post a Comment