আছিপুর চিনা মন্দির - চিনাদের প্রথম বসতি ।। Achipur Chinese Temple - First Chinese Settlement in India
ভারতের প্রথম চিনা নাগরিক টং আছু, যার নামে এই জায়গার নাম ‘আছিপুর’। বজবজ স্টেশন থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে পূজালী পৌরসভার অন্তর্গত আছিপুর। হুগলী নদীর তীরে গড়ে ওঠা এক প্রাচীন চিনা মন্দির – ‘বোগং-বোপো’ (Bogong-Bopo) ও রেকর্ড অনুযায়ী ভারতে বসবাসকারী চিনাদের প্রাচীনতম সমাধি, ‘টং আছুর অশ্বখুরাকৃতি সমাধি’। ভারতে বসবাসকারী বিশেষ করে কলকাতার চিনা প্রবাসীদের কাছে প্রধান তীর্থস্থান হল আছিপুরের এই চিনা মন্দির, যেখানে রয়েছে ভূমি অর্থাৎ পৃথিবীর দেবতা টুডি গং ও সহধর্মিণী টুডি পো। চিনাদের থেকেই যে চিনির সূত্রপাত তারও অন্যতম সাক্ষী এই আছিপুর, যেখানে এই টং আছুর হাত ধরেই শুরু হয়েছিল ভারতের প্রথম সুগার মিল।
কলকাতার চিনাদের নিয়ে আমার একাধিক ব্লগ রয়েছে। তবে আছিপুরের এই ব্লগ সেইগুলোর থেকে আলাদা। এই ব্লগে মূলত দুটি জিনিস তুলে ধরা হল এক, টং আছু ও দুই, আছিপুরের চিনা মন্দির। প্রথম দিকের ব্লগটি টং আছুকে কেন্দ্র করে এবং শেষের দিকে আছিপুরের চিনা মন্দিরকে নিয়ে।
রেকর্ড অনুযায়ী ভারতে চিনা অভিবাসনের সময় চিনারা সর্বপ্রথম আছিপুরেই তাদের বসতি গড়ে তুলেছিল। তারপর উনবিংশ শতাব্দীর প্রাক্কালে আছিপুর ছেড়ে চিনারা চলে আসে মধ্য কলকাতায়। আছিপুরের পর কলকাতার চিনারা বসবাস শুরু করে মূলত দুটি জায়গায়, মধ্য কলকাতার টিরেটা বাজার (১৮০০ থেকে) ও পূর্ব কলকাতার ট্যাংরা / তপসিয়া (১৯১০ থেকে)। তবে সময়ের নিরিখে দেখতে গেলে বাংলার সঙ্গে চিনের প্রথম যোগসূত্র স্থাপন হয় যখন চিনা পরিব্রাজক ফা হিয়েং ও হিউয়েন সাং বাংলার তমলুক বন্দরে আসেন। পরবর্তীকালে এদের পথ অনুসরণ করেই চিন থেকে আসতে থাকে অনেক ভিক্ষু, ভ্রমণকারী, এমনকি বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সে ইতিহাস অনেক পুরনো, বাংলায় আসলেও কখনোই এখানে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস গড়ে তোলেনি। আর যদিও বা গড়ে তোলে সে প্রমাণ কিন্তু ব্রিটিশ আর্কাইভে নেই।
'ইয়াং দা ছাও' - টং আছুর সমাধিসৌধে লেখা তাঁর নাম |
টং আছু ও তার সময়কাল
বাংলার এমনকি ভারতের ইসিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, হাতেকলমে ভারতের প্রথম চিনা নাগরিক হলেন ‘ইয়াং দাইজাং’ (Yang Daijang) বা ‘ইয়াং দা ছাও’ (Yang Da Zhao) বা ‘ইয়াং তাই চাও’ (Yang Tai Chao)। কিন্তু ব্রিটিশ দস্তাবেজে (ব্রিটিশ আর্কাইভ) তিনি পরিচয় পান ‘টং আছু’ (Tong Atchew / Achew / Atchew Tong (Po) ) হিসাবে। একই ব্যক্তির এই ভিন্ন নামের কারণ উচ্চারণগত সমস্যা। টং আছু ঠিক কোন সময়ে কলকাতায় এসেছিলেন তার নথি কিন্তু কোন দলিল দস্তাবেজে পাওয়া যায়নি। তবে অনুমান করা যায় অষ্টাদশ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে তিনি কলকাতা বন্দরে আসেন। মনে রাখতে হবে তিনি এসেছিলেন কলকাতা বন্দরে, বজবজে নয়। তথ্য অনুযায়ী টং আছু চিনের গুয়াংডং প্রদেশের জিয়াংশান বিভাগ থেকে কলকাতায় আসেন।
তবে টং আছুকে নিয়ে কিছু লোককাহিনী প্রচলিত রয়েছে –
প্রথম লোককাহিনী অনুযায়ী টং আছু হলেন একজন চা ব্যবসায়ী। প্রধানত তিনি বার্মা (মায়ানমার) ও ভিয়েতনামে চা রপ্তানি করত। দুর্ভাগ্যক্রমে একবার এই চা রপ্তানির সময়ে তাঁর জাহাজ এসে পড়ে হুগলী নদীতে। সেই সময় আছুর আর্থিক অবস্থা ভালো ছিল না। আছু সিদ্ধান্ত নেয় তাঁর জাহাজের সমস্ত চা তিনি এখানেই বিক্রি করে দেবেন। কিন্তু স্থানীয় কর এতটাই বেশি ছিল যে তাঁর পক্ষে এই বিক্রি অলাভজনক হয়ে দাঁড়াবে। সেই সময় আছু তাঁর ব্যবসায়িক বুদ্ধিতে সমস্ত চা স্থানীয় প্রশাসনকে উপহারস্বরূপ দিয়ে দেন এবং এর বিনিময়ে ওয়ারেং হেস্টিংস তাঁকে এক বিশাল জমি প্রদান করেন।
দ্বিতীয় লোককাহিনী অনুযায়ী, একবার এক চিনা জাহাজ পণ্য রপ্তানির সময় প্রবল ঝড়ের কবলে পড়ে। চিন থেকে চা ও চিনি নিয়ে পাড়ি দেওয়া এই জাহাজের নাবিক ছিলেন আছু। ঝড়ের হাত থেকে জাহাজটিকে বাঁচানোর জন্য আছু জাহাজেই থাকা দু’টি কাঠের দেবতার মূর্তির কাছে প্রার্থনা করতে থাকেন। এরপরেই অলৌকিকভাবে জাহাজটি কোনমতে তীরে ফিরে আসে। ঝড়ের কবল থেকে পুনর্জীবন পাওয়া আছু এই ঘটনাটিকে ভগবানের ইঙ্গিত বলে মনে করেন। আর সেই সূত্রেই তিনি এখানে বসতি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন এবং জাহাজের সেই দেবতাদের সন্মানে একটি মন্দির তৈরি করেন। আর সেই দুই দেবতা হল টুডিগং ও সহধর্মিণী টুডিফো । তবে এখানেও গল্পে রয়েছে আরও একটি মোড়।
তৃতীয় লোককাহিনী অনুযায়ী, কলকাতা বন্দরে আসার পর আছু জানতে পারেন তাঁর জাহাজে দু’টি চোরা ভ্রমণকারী রয়েছে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর আছু যখন সেই দু’ই ভ্রমণকারীর সম্মুখীন হন তখন তারা দুজনেই দু’টি কাঠের টুকরোয় রূপান্তর হয়ে যায়। এই দেখে আছু বুঝতে পারেন এরা আসলে দেবতা এবং তাদেরকে নদীর তীরে প্রতিষ্ঠা করে গড়ে তোলেন মন্দির।
আছিপুর চিনা মন্দিরের প্রবেশদ্বার |
প্রবেশদ্বারের উপরে থাকা মন্দির ও পরিচালকমণ্ডলীর নাম |
মন্দিরের ভিতরে থাকা কিছু প্রাচীন শিলালিপি (হয়তো প্রতিষ্ঠালিপি) |
টং আছু ও সুগার মিল –
আছু-কে নিয়ে গড়ে ওঠা লোককাহিনীগুলি কতটা সত্য তা জানা নেই, তবে আছু সম্পর্কে যে সরকারি নথিগুলি পাওয়া যায় সেখান থেকে জানা যায় আছু একজন চা ব্যবসায়ী। নথি অনুযায়ী কলকাতায় আসার পর তিনি ওয়ারেং হেস্টিংসকে চা উপহার দিয়েছিলেন এবং একটি জমির জন্য আবেদন করেছিলেন। এর সুবাদেই ১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন জেনারেল ওয়ারেং হেস্টিংস বজবজের কাছে আছিপুরে ৬৫০ বিঘা জমি টং আছু-কে বার্ষিক ৪৫ টাকা ভাড়ায় অনুদান দিলেন। ভাড়া দেওয়ার কারণ এই জমি আসলে বর্ধমান রাজার। আর এই সাড়ে ছশো বিঘা জমির উপরেই আছু স্থাপন করলেন ভারতের প্রথম রিফাইন্ড সুগার মিল। এখানে বলে রাখা ভালো আদি কাল থেকেই বাংলায় সুগার আসলে ‘শর্করা’ হিসাবেই পরিচিত। কিন্তু আছুর এই মিল স্থাপনের প্রভাবেই বাংলায় সুগার (শর্করা) পরিচিতি পায় “চিনি” নামে, কারণ চিনারাই সর্বপ্রথম ভারতে তথাপি বাংলায় এই সাদা সুগার(শর্করা) –এর প্রচলন শুরু করেন (অতীতে ভারতে যে সুগারের ব্যবহার হত তা ছিল ব্রাউন সুগার অর্থাৎ অপরিশোধিত চিনি, যাকে ‘খাদ’ বলা হত)। এই সুগার মিলে কাজের জন্যই আছু চিন থেকে প্রায় ১১০ জন চিনা শ্রমিককে নিয়ে এসেছিলেন। ১৭৮২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসের তথ্য অনুযায়ী বজবজের এই সুগার মিলে প্রায় ২,০০০ মণ (৭৪,৬৪৮ কেজি) সুগার বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তুত হয়েছিল। মিলের কাজ আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আছু গভর্নর জেনারেলের কাছ থেকে আরও শ্রমিক আনার আনুমতি চেয়ে আবেদন করেন, যার প্রমাণ আমরা পাই ব্রিটিশ আর্কাইভের একটি চিঠিতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত মিল স্থাপনের পাঁচ বছর পর অর্থাৎ ১৭৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে টং আছু মারা যান। টং আছুর এই সুগার মিল ও চিনা মন্দির স্থাপনের ফলে জায়গাটির নামকরণ হয়ে যায় “আছিপুর”। রেকর্ড অনুযায়ী বর্তমানের এই Achipur ব্রিটিশদের কাছে তখন Atchepore।
বার্ষিক ভাড়া হিসাবে জমি প্রদান ও পরবর্তীকালে সুগার মিল সহ আছিপুরের সমস্ত জমিজমা নিলাম হয়ে যাওয়া |
টং আছুর মৃত্যুর পর চিন থেকে আসা শ্রমিকদের দৌলতেই এই সুগার মিল প্রায় ২৫ বছর টিকে ছিল। কে ছিল মিলের মালিক, কার পরিচালনাতে সুগার তৈরি হত তা কিন্তু কোন সরকারি রেকর্ডে পাওয়া যায়নি। তবে অনেক টালবাহানার পর ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দে কারখানার সমস্ত জমিজমা, যন্ত্রপাতির সমস্তই নিলামে বিক্রি হয়ে যায়। এই নিয়ে ১৮০৪ এর নভেম্বরে কলকাতা গ্যেজেটেও একটি বিজ্ঞাপন বের হয়। তবে সুগার মিল উঠে যাওয়ার কারণ কিন্তু অন্য, এদের মধ্যে অন্যতম কারণ ভারতীয় চিনির দামের উপর অধিক কর। এখানে তৈরি চিনির উপর কর চাপিয়ে যে পরিমাণ দামে বাজারে বিক্রি হত তা ওয়েস্ট ইন্ডিজে তৈরি হওয়া সুগারের সমতুল্য, ফলে পুরো ব্যবস্থাটাই অলাভজনক হয়ে পরে। এদিকে সুগার মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেশিরভাগ চিনা পরিযায়ী শ্রমিক আছিপুর ছেড়ে চলে আসে মূল শহর কলকাতায়। কারণ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সুবাদে কলকাতা তখন অবিভক্ত ভারতের বাস্তব রাজধানী। আছিপুর ছেড়ে চিনা শ্রমিকরা মূলত ধর্মতলার কসাইতোলা অঞ্চলে (বর্তমানে বেন্টিং স্ট্রীট) আশ্রয় নেয়, এবং এখান থেকেই তারা কলকাতার আরও উত্তর দিকে বসবাস স্থাপন করতে থাকে। ছুতোর মিস্ত্রি, জুতো তৈরি, লন্ড্রি, রেস্টুরেন্ট বিভিন্ন কাজে তারা নিজেদের যুক্ত করে নেয়। এখান থেকেই চিনাদের বসতি গড়ে ওঠে টিরেটা বাজার সংলগ্ন এলাকা (যা কলকাতার পুরনো চিনাপাড়া) এবং পরবর্তীতে ট্যাংরায়।
সুপ্রিম কাউন্সিলকে এবং হেস্টিংসকে জানানো টং আছুর অভিযোগ ও পরবর্তী সময়ে কাউন্সিলের সতর্কবার্তা |
টং আছু-কে নিয়ে কয়েকটি প্রশ্নোত্তর –
এখানে কয়েকটি প্রশ্ন আসতেই পারে। উপরের ঘটনাগুলি পড়ে মনে হতেই পারে যে টং আছুর প্রথমবার কলকাতায় আগমন ও ওয়ারেং হেস্টিংসের কাছ থেকে অনুদান হিসাবে বিস্তর জমিজমা এবং সেখানে সুগার মিল স্থাপন। তবে এখানেও রয়ে যায় একটা কিন্তু। ব্যাপারটা কি এতোটাই সোজা? চিন থেকে আসা এক নাগরিক যে কিনা বাংলার কাউকেই চেনে না, সে এসে এখানকার জেনারেলকে চা উপহার দিল এবং বিনিময়ে সুগার মিল স্থাপনের জন্য হেস্টিংসের কাছ থেকে জমি পেয়ে গেল। তাহলে?
তাহলে কি টং আছুর এটা প্রথমবার কলকাতায় আগমন নয়? কারণ যে সময়ের কথা বলা হচ্ছে সে সময়ে হেস্টিংস কোম্পানির একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। কোন সাধারণ মানুষের পক্ষে তাঁর সাথে সরাসরি দেখা করার সুযোগ থাকতে পারে না। হয়তো আগে থেকেই আছুর সঙ্গে ব্রিটিশদের যোগাযোগ ছিল। একটি চিঠির মাধ্যমে জানা যায় চিনি ছাড়াও অমুদপুরে তাঁর আরাকের (দেশী মদের) ব্যবসা ছিল। তাহলে কি আছুর এই কলকাতায় আগমন দ্বিতীয়বার?
আর যদিও বা ধরে নিই টং আছু প্রথমবার কলকাতায় এসেছিলেন, তাহলে কি এটা অনুমান করা যায় জমি দানের মাধ্যমে হেস্টিংসের কোন রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি ছিল?
এপ্রসঙ্গে বলি যে সময়ে ওয়ারেং হেস্টিংসের সাথে টং আছুর এই সুগার মিল স্থাপনের কথা বলা হচ্ছে অর্থাৎ ১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দ, সেই সময়ে কিন্তু চিনির মূল যোগান দিয়ে আসছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুগার প্ল্যান্টগুলি। ইউরোপের বাজারে শুধুমাত্র এই ক্যারিবিয়ান ক্ষেতগুলি তাদের আধিপত্য বিস্তার করেছিল। হয়তো আছিপুরে এই সুগার মিল স্থাপনের মাধ্যমে বাংলার গভর্নর ইউরোপের বাজার ধরতে চেয়েছিল কিমবা এর মাধ্যমে রাজস্ব সৃষ্টির নতুন পথ দেখতে পেয়েছিল।
ওয়ারেং হেস্টিংস-কে লেখা টং আছুর চিঠি |
তবে হেস্টিংসের দূরদর্শিতার আর একটি দিক থাকতে পারে। কারণ হেস্টিংস অনেক দিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন ভারতের সাথে চিনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তোলার। এ বিষয়ে নতুন রুট খোলার জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে কূটনৈতিক ভ্রমণকারী স্যামুয়েল টার্নার তো অন্যদিকে স্কটিশ অ্যাডভেঞ্চারার জর্জ বোগ্লে-কে তিব্বতে পাঠান। একদিকে আসাম জুড়ে ছড়িয়ে থাকা চা বাগানের স্বত্বাধিকারী তো অন্যদিকে তিব্বতের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলা। লক্ষ্য একটাই তিব্বতের গিরিপথের মাধ্যমে চিনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য গঠন করা। বোগ্লের মারফত হেস্টিংস তিব্বতের সাথে এক সন্ধিও করে বসেন, এই সন্ধির পরিপ্রেক্ষিতেই পাঞ্চেন লামার ইচ্ছায় ১৭৭৬ খ্রিষ্টান্দে হাওড়ার ঘুশুড়ীতে গড়ে ওঠে "ভোটবাগান মঠ", যা ভারতের সমভূমিতে স্থাপিত প্রথম বৌদ্ধমঠ। তবে সে ইতিহাস অন্য, ভোটবাগান মঠের বিষয়ে রয়েছে আলাদা ব্লগ, ভোটবাগানের বৌদ্ধমঠ। কিন্তু এখানে এই কথাটি বলার কারণ, হেস্টিংস হয়তো আছুর মাধ্যমে চিনের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চেয়েছিল।
আর একটি প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কি কলকাতায় প্রথম চিনা
বসবাসকারী টং আছু? মনে হয় না। কারণ সাম্প্রতিক কিছু অনুসন্ধান নির্দেশ করছে টং আছু
প্রথম চিনা বসবাসকারী নাও হতে পারে। এর অন্যতম সূত্র আছুর একটি চিঠি। ১৭৮১
খ্রিষ্টাব্দে আছু সুপ্রিম কাউন্সিলকে এবং হেস্টিংসকে জানাচ্ছেন কলকাতায় বসবাস করা
কিছু চিনারা তার এই সুগার মিল চালানো কে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এই ভবঘুরে চিনারা তার
মিলের কর্মীদের প্রলুব্ধ করছে এবং তিনি এই বিষয়ের জন্য কাউন্সিলের কাছে সাহায্য
চাইছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কাউন্সিল
একটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কলকাতার চিনাদের উপরে একটি সতর্কবার্তা প্রকাশ করেন।
অর্থাৎ আছিপুরে যে সর্বপ্রথম চিনা বসতি গড়ে উঠেছিল তা কিছুটা হলেও ভুল। হয়তো আছিপুরে
বসতি গড়ে ওঠার আগে থেকেই কিছু চিনারা কলকাতায় বসতি গড়েছিল। এক্ষেত্রে ভিয়েতনামি
পর্যটক লে ভ্যান ফুক (Le Van Phuc) জানিয়েছিলেন ফুজিয়াং ও গুয়াংদং প্রদেশ থেকে আসা প্রায় শতাধিক চিনারা
কলকাতায় বসবাস করত। লেখক অ্যালেন অক্সফেল্ড -এর মতে কলকাতায় প্রথম চিনা বসতি স্থাপনকারী হলেন একজন পলাতক নাবিক এবং তিনি এর সূত্র হিসাবে তুলে ধরেছেন ১৭৮৪ কলকাতা গেজেট-এর এক বিঞ্জাপন, যেখানে টম ফ্যাট নামে একজন চিনা ব্যক্তি জলের ট্যাঙ্ক পরিষ্কারের জন্য নিয়োজিত ছিলেন।
কিন্তু পূর্বের ঘটনা এখন শুধুই অনুমান। কি ঘটেছিল? আছু কবে এসেছিল? কেনই বা হেস্টিংস তাঁকে জমি দিল? এখন শুধুই তথ্যের ভিত্তিতে অনুমান করা যায়। তাই টং আছুর কাহিনী আপাতত এই পর্যন্তই, এরপর আমরা ঘুরে দেখব টং আছুর প্রতিষ্ঠিত চিনা মন্দির, যা পরিচিত আছিপুরের চিনা মন্দির...
আছিপুরের চিনা মন্দির (‘বোগং-বোপো’)
মূল মন্দির চত্বরের প্রবেশদ্বার |
মন্দিরের প্রাঙ্গণ ও চিনা ক্যালিগ্রাফি |
মন্দিরের প্রবেশদ্বারের দু'পাশে চিনা ক্যালিগ্রাফি |
জনশ্রুতি অনুযায়ী আছিপুরের এই চিনামন্দির প্রতিষ্ঠা করেন স্বয়ং টং আছু। কলকাতার চিনারা বিশ্বাস করেন আছু নিজে এই মন্দিরের দেবদেবী বোগং-বোপো-র মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আবার অনেকে মনে করেন মূর্তিটি আছু প্রতিষ্ঠা করলেও মন্দিরটি পরে অন্য কেউ তৈরি করেছিলেন। তবে বর্তমানে এই মন্দির অনেকটা আধুনিক। আছুর প্রতিষ্ঠা করা সেই দেবদেবী এখনও আছে, তবে পরবর্তীকালে মন্দিরের স্থাপত্য অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। রাস্তার পাশে মন্দির চত্বরের প্রবেশদ্বার, স্বাভাবিক ভাবেই চিনা আর্কিটেকচারে গড়ে ওঠা বিশাল প্রবেশদ্বার। তবে এর পাশেই অন্যদিকে রয়েছে আরও একটি প্রবেশদ্বার, যেখানে প্রবেশদ্বারের শীর্ষে দেখতে পাওয়া যায় মন্দির প্রতিষ্ঠার সাল ১৭১৮ খ্রিষ্টাব্দ। তবে এই প্রতিষ্ঠা সাল সম্ভবত ভুল। কারণ আছিপুরে চিনা বসতি গড়ে ওঠে মোটামুটি ১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দের পর (টং আছুর সুগার মিল স্থাপন), তাহলে এখানে সময়ের অন্তর ৬০ বছর, যা সম্ভব নয়। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠা সাল সম্ভবত ১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দ হতে পারে। মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশের পর দেখতে পাওয়া যায় একটি খোলা মাঠ, যা চিনারা তাদের উৎসবের সময় ব্যবহার করে। মাঠের বামদিকে রয়েছে একটি জলাশয় এবং ডানদিকে মূল মন্দির প্রাঙ্গনে যাওয়ার ছোট প্রবেশপথ।
মন্দির প্রাঙ্গনে প্রবেশের পর দেখতে পাওয়া যায় একটি বড় টেবিল। এই টেবিলটি সাধারণত চিনা নববর্ষে চিনারা তাঁদের দেবদেবীকে নৈবেদ্য অর্পণ করার জন্য ব্যবহার করে থাকে। নৈবেদ্যে থাকে বিভিন্ন ফল, চা, বিস্কুট, মদ এবং রোস্টেড শূকর বা মুরগি। টেবিলের বামদিকে রয়েছে আরও একটি ঘর। একটি ব্লগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী আগে এই ঘরটিতে থাকত দক্ষিণরায়। হ্যাঁ সুন্দরবন অঞ্চলে বাঘ দেবতা দক্ষিণরায়। তবে আমি কিন্তু সেরকম কোন ছবি দেখতে পায়নি। বরং ঘরটিতে এখন যে চিনা দেবতার ছবি রয়েছে তিনি আসলে যুদ্ধের দেবতা গুয়ান তি বা গুয়ান ইউ।
টুডি গং (Tu Di Gong) ও সহধর্মিণী টুডি পো (Tudi Po) |
চিনা দেবতা গুয়ান তি / গুয়ান ইউ |
মূল মন্দিরের প্রবেশদ্বারের উপরে চিনা অক্ষরে লেখা বোর্ড |
তবে আছিপুরের এই মন্দির উৎসর্গ করা পৃথিবীর অর্থাৎ মাটির দেবতা টুডি গং (Tu Di Gong) ও সহধর্মিণী টুডি পো (Tudi Po) -কে। মন্দিরের খোলা চত্বরের অপর প্রান্তেই রয়েছে এই দেবদেবীর মূর্তি। মন্দিরটি আধুনিক হলেও মূর্তিগুলি পুরানো, বিশ্বাস করা হয় টং আছু স্বয়ং এই মূর্তিগুলি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, আর কাঠের তৈরি এই মূর্তি দু’টি একমাত্র এই মন্দিরের প্রাচীনতার সাক্ষী। চিনা মাইথোলজি অনুযায়ী টুডি গং হলেন পৃথিবীর দেবতা। চিনের বিভিন্ন প্রদেশ অনুযায়ী এই দেবতার নাম পরিবর্তন হয়েছে, কোথাও টুডি গং তো কোথাও তু-তি-কুং (T’u-ti Kung), তুদি শেন (Tudi Shen), টুডি জুন (Tudijun)। আছিপুরের এই টুডি গং-এর পাশে রয়েছে তাঁর সহধর্মিণী টুডি পো। তবে ভারতীয় চিনাদের কাছে তাঁরা ধার্তি পিতা (Dharti Pita) ও ধার্তি মাতা (Dharti Mata) বা খুদা (Khuda) ও খুদি (Khudi) হিসাবে পরিচিত। এই মন্দিরের ঠিক পিছনদিকে রয়েছে আরও একটি ছোট মন্দির, তবে এখানে বিভিন্ন হিন্দু দেবদেবীদের মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে।
চিনাদের অন্য মন্দিরগুলির মতো এখানেও দেখতে পাওয়া যায় চিনা ক্যালিগ্রাফি। মন্দির চত্বরে, মূল মন্দিরের প্রবেশদ্বারে ও কয়েকটি স্তম্ভে দেখতে পাওয়া যায় এই ক্যালিগ্রাফি। মন্দিরের উঠোনে পশ্চিমদিকের দেওয়ালে দেখতে পাওয়া যায় মন্দির প্রতিষ্ঠার শিলালিপি। এদের মধ্যে তিনটি শিলালিপি বেশ পুরনো, চিনা অক্ষর গুলিও অনেকটা আবছা হয়ে গেছে, হতে পারে এগুলি মন্দির প্রতিষ্ঠার একদম শুরুর দিকের শিলালিপি।
টং আছুর সমাধির সামনে চিনাদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন |
সমাধি? না টং আছুর স্মৃতিসৌধ –
আছিপুর মন্দির থেকে বেরিয়ে প্রায় ৭০০ মিটার দক্ষিণদিকে গেলে নদীর ধারে দেখতে পাওয়া যাবে লাল রঙের অশ্বখুরাকৃতি টং আছুর স্মৃতিসৌধ। প্রথমেই বলি এই স্মৃতিসৌধ কিন্তু খুঁজে পাওয়া মুশকিল, কারণ রাস্তার পাশে প্রথমে দেখতে পাওয়া যাবে একটি ইঁট ভাটা, যার পাশ দিয়ে চলে গেছে একটি ছোট মেঠো পথ। এই রাস্তার শেষেই দেখতে পাওয়া যাবে এই সৌধ। দেখে মনে হয় স্মৃতিসৌধটি আধুনিক, আগেরটি সম্ভবত এইখানেরই কোন এক জায়গায় ছিল। স্মৃতিসৌধের মধ্যে যে ফলক দেখতে পাওয়া যায় সেখানে আছুকে সম্বোধন করা হয়েছে ‘ইয়াং দা ছাও’।
চিনা নববর্ষের সময় ধূপকাঠি জ্বালানো |
চিনা নববর্ষে ভগবানের উদ্দেশ্যে নৈবেদ্য পরিবেশন |
আছিপুরের চিনা নববর্ষ
আছিপুরে ঘুরতে যাওয়ার শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে
চিনা নববর্ষের সময় (Chinese Lunar New Year), কারণ এই সময়ে গেলেই মন্দির ভ্রমণের সঙ্গে তাদের নিজস্ব উৎসবে
সামিল হওয়া যায়। নববর্ষ ছাড়া অন্য সময়ে গেলে সাধারণত মূল মন্দির বন্ধ থাকে। চিনা
নববর্ষের এক সপ্তাহ পরে পরপর দু-তিন সপ্তাহ (শুধুমাত্র রবিবার) চলে আছিপুরর এই উৎসব।
কলকাতার বিভিন্ন জায়গা থেকে চিনারা আসে আছিপুরের এই মন্দিরে পুজো দিতে। প্রথমে
তারা যায় মন্দিরে এবং শেষে নদীর ধারে আসে টং আছুকে শ্রদ্ধা জানাতে। কলকাতার
বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা চিনারা সঙ্গে করে আনে তাদের নৈবেদ্য, যেগুলি তারা মন্দিরের
সামনে একটি বড় টেবিলে সাজিয়ে দেবতাদের অর্পণ করে। নৈবেদ্যর মধ্যে থাকে বিভিন্ন ফল,
চা, বিস্কুট, কোল্ডড্রিঙ্কস, মদ, এছাড়াও একটি আস্ত ঝলসানো (রোস্টেড) শূকর কিমবা
মুরগি। শহরের বাকি চিনা মন্দিরগুলোর মতো আছিপুরের মন্দিরেও প্রার্থনা করতে আসা
চিনারা ধূপ-মোমবাতি ছাড়াও নিয়ে আসে কাগজের টাকা অর্থাৎ পেপার মানি, চিনা ভাষায় Joss Paper। মন্দিরে এই নকল কাগজের টাকা পুড়িয়ে তারা প্রার্থনা
করে। মৃত পূর্বপুরুষদের স্মরণে এই কাগজের টাকা পোড়ান চিনের একটি প্রথাগত
আচার-অনুষ্ঠান। প্রথমে তারা এই কাগজের টাকা গুলোকে দেবতাদের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা
করে এবং তারপর সেইগুলিকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। তারা বিশ্বাস করে এর মাধ্যমে মৃত
ব্যক্তি অর্থাৎ তাদের পূর্বপুরুষরা তাদের থেকে এই প্রার্থনা গ্রহণ করবে এবং
স্বর্গে তাঁরা পুনর্জীবন লাভ করবে। এছাড়াও আছিপুরের এই মন্দিরে চিনাদের আরও একটি
প্রার্থনা দেখতে পাওয়া যায়। মন্দির প্রাঙ্গনের ডানদিকে রয়েছে একটি বিশ্রামের
জায়গা। এখানেই দেওয়ালের একটি তাকে সাজানো রয়েছে কিছু চিনা কাঠি, যাদেরকে বলা হয় কাউ
চিম বা কাউ সিম (Kau Chim)। এই কাউ চিম আসলে ভগবানের কাছে ভাগ্য
যাচাই করার একরকমের মাধ্যম, অনেকটা ঠিক লটারির মতো। এই ছোট ছোট কাঠি/লাঠির মধ্যে
লেখা থাকে সংখ্যা। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করার সময় একটি গোল পাত্রের (খানিকটা
টিউবের মতো দেখতে) মধ্যে এই লাঠিগুলি রেখে ঝাঁকাবেন। এই ঝাঁকানোর ফলে পাত্রটি
থেকে একটি লাঠি বাইরে এসে পড়বে। এবার সেই লাঠিতে লেখা সংখ্যা অনুযায়ী একটি বইয়ের
মাধ্যমে সেই সংখ্যার সম্বন্ধে লেখা উক্তি তাদের নতুন বছরের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।
অর্পণ করা নৈবেদ্য |
অর্পণ করা নৈবেদ্য (** রোস্টেড মুরগি) |
কলকাতার মতো এখানেও চিনা নববর্ষ উৎযাপনের অন্যতম প্রতীক লায়ন ডান্স ও আতসবাজি পোড়ানোর মাধ্যমে সূচনা হয়। তবে গত দু’ই বছর কোভিড মহামারির কারণে সেরকমভাবে নববর্ষ উদযাপন হয়নি। লায়ন ডান্স এবছরও দেখতে পাওয়া যায়নি, জানা যায় স্থানীয় প্রশাসন এই ডান্সের জন্য অনুমতি দেয়নি। হয়তো আগামী বছর থেকে অনুমতি দেবে, তখন আছিপুরে জাঁকজমকভাবে চিনা নববর্ষ পালন করা হবে। আছিপুরের এই মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছেন কলকাতার টিরেটা বাজারের গি হিং চার্চ ও ক্লাব। মন্দিরের কেয়ারটেকার হলেন দু’ই মুসলিম ব্যক্তি, মন্দির ও আছুর সমাধিসৌধ দেখাশোনার দায়িত্ব এরা বংশানুক্রমে পালন করে আসছেন। বছরের বাকি সময়গুলিতে এখানে চিনাদের দেখা না গেলেও নববর্ষের এই দিনগুলিতে তারা ফিরে আসে আছিপুরে। নিজেদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সবটাই ভাগ করে নেয় স্থানীয় মানুষদের সাথে।
******************************************************
লেখা, গবেষণা ও ছবি - প্রীতম নস্কর
ই-মেল - pritamnaskar.pn@gmail.com
ব্লগটি ভালো লেগে থাকলে ব্লগের লিঙ্ক শেয়ার করতে পারেন, তবে পূর্বানুমতি ছাড়া আমার তোলা
আলোকচিত্রগুলি এবং ব্লগের রচনাগুলি অন্য কোথাও কপি-পেস্ট বা বাণিজ্যিক ভাবে
ব্যবহার করা চলবে না।
******************************************************
আছিপুর মন্দিরের পিছনদিকে থাকা একটি হিন্দু মন্দির |
আছিপুর মন্দিরের মাঠ |
মন্দিরের অন্দরে থাকা জলাশয় |
দূরে ডানদিকে আছিপুর ফেরিঘাট |
আছিপুর ঘাটের সামনে থাকা তিনটি বাংলাদেশি জাহাজ |
গুগল ম্যাপ / কোঅরডিনেট -
- আছিপুর চিনা মন্দির - 22°27'05.3"N 88°07'43.9"E
- টং আছুর স্মৃতিসৌধ - 22°26'44.0"N 88°07'45.0"E
কলকাতার চিনাদের নিয়ে আরও কিছু ব্লগ -
- কলকাতার পুরানো চিনাপাড়া - টিরেটা বাজার
- সি ইপ চার্চ
- নাম সুন চার্চ
- তুং অন চার্চ ও নানকিং রেস্টুরেন্ট
- সি ভই ইউন লিওং ফুথ চার্চ
কীভাবে যাবেন -
ট্রেনযাত্রা + জলপথ + সড়কপথ - হাওড়া থেকে ট্রেনে উলুবেড়িয়া স্টেশন। সেখান থেকে উলুবেড়িয়া ফেরিঘাট। যেহেতু এই ফেরিঘাটের অপর প্রান্তেই আছিপুর, তাই এখান থেকে স্টিমারে আছিপুর। সেখান থেকে মিনিট দশেক হাঁটা পথে চিনামন্দির। অথবা, শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বজবজগামী ট্রেনে নামতে হবে বজবজ স্টেশন। সেখান থেকে বজবজ রোড ধরে যেতে হবে পূজালি। এই রাস্তা ধরেই ঠিক পূজালী ফেরিঘাট পৌঁছানর আগেই বামদিকের মোড়ে দেখতে পাওয়া যাবে চিনেম্যানতলা যাওয়ার রাস্তা। এই রাস্তা ধরেই প্রায় এক কিলোমিটার গেলে আছিপুরের চিনা মন্দির।
তথ্যসূত্র -
- Bengal District Gazetteers – 24-Parganas – by O’Malley
- The Chinese in South Asia – by Zhang Xing and Tansen Sen
- Handbook of Chinese Mythology - Lihui Yang and Deming An, with Jessica Anderson Turner
- The Chinese in Calcutta: A Study on Settlement and Demographical Patterns - Arpita Bose
- The Chinese of Calcutta – Jawhar Sircar
Comments
Post a Comment